চট্টগ্রাম রেলওয়ে

কদমতলী রেল ক্রসিংয়ে চরম ঝুঁকিতে উল্টো পথে চলে যানবাহনঃ নিত্য যানজট

 

চট্টগ্রাম নগরীর অন্যতম জনগুরুত্বপূর্ণ কদমতলী রেল ক্রসিং দিয়ে প্রতিনিয়ত চরম ঝুঁকি নিয়ে উল্টো পথে চলাচল করে বিভিন্ন যানবাহন। রিক্সা, অবৈধ ব্যাটারী রিক্সা ও মোটর সাইকেল থেকে শুরু করে সকল ধরণের গণ ও পণ্য পরিবহণ সুযোগ পেলেই সিগনাল পোস্ট অমান্য করে উল্টো পথে চলাচল করে। কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরাও হেলমেট, রেজিস্ট্রেশন ও লাইসেন্সবিহীন মোটর সাইকেল চালিয়ে বেপরোয়াভাবে উল্টো পথে চালিয়ে রেল ক্রসিং পার হতে দেখা যায়। সিগনাল না মানার কারণে অনেক সময় ক্রসিংয়ের মাঝখানে রেলের সাথে বিভিন্ন যানবাহন মুখোমুখি হতে দেখা গেছে। তাদের বিরুদ্ধে তেমন কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। ভেঙ্গে পড়েছে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, সৃষ্টি হয় নিত্য যানজট। চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) ট্রাফিক-দক্ষিণ বিভাগের টিআই (সদরঘাট) মোশারফ হোসেন ও রেলওয়ের কিছু কিছু কর্মচারীর উদাসীনতার কারণে কদমতলী রেল ক্রসিং ও আশপাশের এলাকায় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় হ-য-ব-র-ল অবস্থা পরিলক্ষিত হয়। সিগনাল অমান্য করে উল্টো পথে গাড়ি চালানোর কারণে কদমতলী, আমবাগান, খুলশী ও পাহাড়তলীসহ অন্যান্য রেল ক্রসিংগুলোতে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে বলে ভূক্তভোগীরা জানান। তবে এসব অব্যবস্থাপনার জন্য ট্রাফিক বিভাগকে দায়ী করেছে রেলওয়ে।
জানা গেছে, কয়েক দিন আগে চলন্ত ট্রেনে উঠতে গিয়ে একজন আরএনবি সদস্যের হাত কাটা পড়েছে। কদমতলী রেল ক্রসিংয়ের উভয় পার্শ্বে ৪টি সিগনাল ব্যারিয়ার রয়েছে। এখানে ২৪ ঘন্টায় তিন শিফটে ৪ জন করে ১২ জন গেট কীপার সিগনাল ব্যারিয়ারে দায়িত্ব পালন করার কথা থাকলেও কর্তব্যরত রয়েছে মাত্র ৬ জন। রেল ক্রসিংয়ের উভয় পাশে আরও দু’টি সিগনাল ব্যারিয়ার ওপেন থাকার কারলে সিগনাল অমান্য করে চরম ঝুঁকি নিয়ে উল্টো পথ দিয়ে গাড়ি চলাচল করে। এদিকে এলাকার প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় যত্রতত্র গাড়ির রং পার্কিং, অবৈধ মোটর সাইকেল গ্যারেজ, টায়ারের দোকান ও অন্যান্য স্থাপনার বর্ধিত অংশে দখল হয়ে গেছে কদমতলী মূল সড়কের উভয় পাশ। একদিকে প্রভাবশালী মহল কর্তৃক সড়কে অবৈধ স্থাপনা তৈরী, অন্যদিকে লোকবল সংকটের কারণে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ভেঙ্গে পড়ায় কদমতলী মোড় থেকে উত্তর দিকে আর্টমাসিং মোড়, পূর্ব দিকে শুভপুর বাস স্ট্যান্ড হয়ে মাঝির ঘাট টু টং ফকিরের মাজার, দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে পাঠানটুলী ও পোস্তার পাড় এলাকা জুড়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। গতকাল ৮ ডিসেম্বর রোববার সরেজমিনে এলাকা ঘুরে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সিএমপি’র ট্রাফিক-দক্ষিণ বিভাগের টিআই (সদরঘাট) মোশারফ হোসেন মুঠোফোনে বলেন, কদমতলী রেল ক্রসিংয়ে প্রায় সময় সিগনাল পোস্ট অমান্য করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উল্টো পথে গাড়ী চলাচলের বিষয়টি সঠিক। ৫ আগস্ট পরবর্তী পরিস্থিতিতে কেউ কারও কথা মানতে চায়না। জীবনের ঝুঁকি রোধে এ এলাকাসহ সর্বত্র হেলমেটবিহীন মোটর সাইকেল চালানো, উল্টো পথে গাড়ী চালানো, সড়ক থেকে অবৈধ পার্কিং ও অবৈধ গাড়ির স্ট্যান্ড সরিয়ে নেয়াসহ ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় সড়ক শৃঙ্খলা আনায়নে আমরা কাজ করে যাচ্ছি, এ ব্যাপারে সচেতনতার কোন বিকল্প নেই, আমরা সকলের সহযোগিতা চাই।
কদমতলী রেল ক্রসিংয়ে উল্টো পথে গাড়ী চলাচলের বিষয়ে জানতে চাইলে কর্মরত গেট কীপার অর্জুন বড়–য়া ট্রাফিক বিভাগকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, ট্রাফিক পুলিশ আন্তরিক হলে কেউ উল্টো পথে গাড়ী চলাচলের সাহস পাবেনা। রেল ক্রসিংয়ে যত দোষ সবগুলো রেল কর্তৃপক্ষের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়।
চট্টগ্রাম রেলওয়ের সহকারী স্টেশন মাস্টার ফারুক আজম বলেন, লোকবল সংকটের কারণে সারাদেশে রেলওয়ের সেবা বিঘিœত হচ্ছে। কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন রুটে রেলের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা বাড়েনি। বাংলাদেশ রেলওয়েতে ৪৭ হাজার কর্মচারীর পদ রয়েছে। তন্মধ্যে কর্মরত রয়েছে প্রায় ২০ হাজার কর্মচারী। রাজস্বখাতের বাইরে রেলে মাস্টার রোল ও আউটসোসিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারীরা নিয়মিত বেতন-ভাতা পাচ্ছেনা। কদমতলীসহ দেশের সকল রেল ক্রসিং ও রেলের অন্যান্য স্থাপনায় লোকবল নিয়োগ দিলে আমরা দুর্ঘটনামুক্ত জনগণের কাঙ্খিত সেবা নিশ্চিত করতে পারবো।
এ বিষয়ে মোবাইলে জানতে চাইলে ট্রাফিক-দক্ষিণ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ মাহবুব আলম খান, পিপিএম জানান, লোকবল সংকটের কারণে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণে আনতে সাময়িক কষ্ট হচ্ছে। শুধু কদমতলী রেল ক্রসিং নয়, অধীনস্থ সড়কে হেলমেট, রেজিস্ট্রেশন ও লাইসেন্সবিহীন যারা উল্টো পথে গাড়ী চালায় কিংবা অবৈধ গাড়ী চালায় তাদের বিরুদ্ধে ট্রাফিক বিভাগ প্রতিনিয়ত আইনানুগ ব্যবস্থা অব্যাহত রেখেছে। আমি নিজেও সড়কে গিয়ে অবৈধ গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে ব্যবস্থা নিয়েছি। ###

Related Posts