নিজস্ব প্রতিবেদক
চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে সারবোঝাই ‘এমভি আল-বাখেরা’ জাহাজে সাত খুনের প্রকৃত কারণ উদঘাটন, হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতার ও নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়াসহ চার দাবিতে দেশব্যাপী কর্মবিরতি পালন করছেন নৌযান শ্রমিকরা। বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন এই ধর্মঘটের ডাক দেয়।
বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে শুরু হওয়া নৌযানের শ্রমিকদের এই কর্মবিরতিতে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙর থেকে সব ধরনের পণ্য খালাস বন্ধ হয়ে গেছে। পাশাপাশি কর্ণফুলী নদীর ১৬টি ঘাটসহ দেশের অভ্যন্তরীণ নৌপথে পণ্য পরিবহন পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। শত শত লাইটারেজ জাহাজ অলস বসে আছে। আমদানি করা পণ্য লাইটারিং বন্ধ হওয়ায় বহির্নোঙরে অলস বসে আছে ২০টির বেশি বিদেশি মাদার ভেসেলও।
লাইটার জাহাজ নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বাংলাদেশ ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট কো–অর্ডিনেশন সেলের তথ্য অনুযায়ী, নৌযান শ্রমিকদের কর্মবিরতির কারণে দেশের ৫৭টি ঘাটে ৭৩৮টি জাহাজে আটকা পড়েছে প্রায় ১০ লাখ ১১ হাজার ২৩৫ টন পণ্য। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জাহাজ আটকা পড়েছে যশোরের নোয়াপাড়া ঘাট, নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর ঘাট, মেঘনা ঘাট ও সিরাজগঞ্জের ঘোড়াশাল ঘাটে। কর্ণফুলী নদী এবং ঘাটেও বিপুল সংখ্যক লাইটারেজ জাহাজ পণ্য নিয়ে অলস ভাসছে।
এসব পণ্যের মধ্যে আছে- গম, চিনি, মসুর ডাল, হলুদ মটর, লবণ, ভোজ্যতেল, কয়লা, পাথর, সিমেন্ট ক্লিংকার, স্ল্যাগ, সার।
কর্মবিরতির কারণে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম বন্দরের একাংশ ও বহির্নোঙ্গরে পণ্য খালাসে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের তথ্য অনুযায়ী, দুইদিন ধরে পণ্য পরিবহণ বন্ধ থাকায় খালাসের অপেক্ষায় সমুদ্র ও নদীবন্দরগুলোতে আটকে পড়েছে প্রায় ১৫ লাখ মেট্রিকটন বিভিন্ন ধরণের পণ্য। এ ছাড়া বহির্নোঙ্গরে মাদার ভ্যাসেলগুলো অলসভাবে বসে থাকায় প্রতিটি জাহাজ ১০ থেকে ১৫ হাজার ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
ধর্মঘটের কারণে চট্টগ্রাম কর্ণফুলী নদীর ১৬টি ঘাটে শত, শত লাইটারেজ জাহাজ অলস বসে আছে। এসব জাহাজ পণ্য খালাসের জন্য গত দুইদিন ধরে বহির্নোঙ্গরে যাচ্ছে না। একইভাবে পণ্য নিয়েও গন্তব্যে যাচ্ছে না নৌযানগুলো।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক জানিয়েছেন, বন্দরের বহির্নোঙ্গরে ২০টি মাদার ভ্যাসেল আমদানি করা পণ্য খালাসের জন্য দুইদিন ধরে অপেক্ষমাণ আছে। এসব জাহাজে মটর, মসুর ডাল, গম, সয়াবিন বীজ, সার, সিমেন্ট ক্লিংকারসহ প্রায় সাড়ে চার লাখ মেট্রিকটন বিভিন্ন ধরণের খোলা পণ্য আছে।
সচিব বলেন, ‘মাদার ভ্যাসেলগুলোতে কোনো কাজ হচ্ছে না। এতে জাহাজের ওয়েটিং টাইম বাড়ছে। প্রত্যেকটি জাহাজের ফিক্সড অপারেটিং কস্ট বাবদ ১০ থেকে ১৫ হাজার ডলার গচ্চা যাচ্ছে।’
তবে বর্হিনোঙ্গরে খোলা পণ্য খালাস বন্ধ থাকলেও চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন কনটেইনার জেটিতে খালাস পুরোপুরি স্বাভাবিক আছে বলে জানান সচিব ওমর ফারুক।
এদিকে লাইটারেজ জাহাজ চলাচল নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন সেলের (বিআইডব্লিউটিসি) একটি সূত্র জানিয়েছে, ধর্মঘটের কারণে ৫০টিরও বেশি নদী পয়েন্টে আমদানি পণ্য খালাস এবং অভ্যন্তরীণ নৌপথে দেশব্যাপী পণ্য পরিবহণ টানা দ্বিতীয় দিনের মতো বন্ধ আছে।
ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল, চাঁদপুর, খুলনা, বাঘাবাড়ি, আশুগঞ্জ এবং অন্যান্য ৫৬টি নদীপথে অলস অবস্থায় থাকা ৭৭৩টি লাইটার জাহাজে প্রায় সাড়ে ১০ লক্ষ টন আমদানি পণ্য আটকা পড়েছে। এর মধ্যে ১২০টি লাইটার জাহাজ যশোরের নোয়াপাড়া ঘাট এলাকায় এবং ৭৭টি জাহাজ নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুরে আটকা পড়েছে।
এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে বাজারে ভোগ্যপণ্য ও শিল্পের কাঁচামাল সরবরাহ সংকট তৈরি আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়াডার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট খায়রুল আলম সুজন বলেন, ‘ধমর্ঘটের কারণে পণ্য সরবাহের যে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া সেটা ব্যাহত হচ্ছে। আবার জাহাজগুলো থেকে যে খালাস বন্ধ আছে, সেখানে জাহাজ জট তৈরির সম্ভাবনা আছে। কারণ, ধর্মঘট প্রত্যাহারের পর পণ্য খালাস করে আবার পণ্য বোঝাই করে সেগুলো রওনা দেওয়ার যে প্রক্রিয়া তাতে একটা জট লেগে যাবার আশঙ্কা আছে।’
বাংলাদেশ লাইটারেজ শ্রমিক ইউনিয়নের সিনিয়র সহ-সভাপতি নবী আলম বলেন, ‘এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশ ভীষণ সংকটে পড়ে যাবে। বাজারে প্রভাব পড়বে। এজন্য যতদ্রুত সম্ভব সংকটের সমাধান করে পরিস্থিতির সমাধান করে ফেলা দরকার। এ বিষয়ে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।’