সিনিউজ ডেস্ক:
মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ‘ও’ লেভেলের শিক্ষার্থী আনুশকা নূর আমিনকে ধর্ষণ ও খুনের দায়ে অভিযুক্ত ইফতেখার ফারদিন দিহানের বাসার সামনে তিনজনের সন্দেহজনক গতিবিধি দেখা গেছে সিসিটিভি ফুটেজে।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ঘটনার দিন আনুশকা ওই বাসায় প্রায় দেড় ঘণ্টা অবস্থান করেছিলেন। ওই সময় তিনজনকে সন্দেজনকভাবে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। তবে তাদেরকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে দিহানের বাসার দারোয়ান দুলাল মিয়া পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানান, দিহানের বাসায় ঘটনার দিন একাই গিয়েছিলেন আনুশকা। ঘটনার পর দিহান একাই গাড়িতে করে আনুশকাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। বাসার ভেতরে ও হাসপাতালে যাওয়ার সময় তাদের সঙ্গে কেউ ছিলো না।
বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) ঘটনার পর থেকেই পলাতক ছিলেন দিহানের বাসার দারোয়ান দুলাল মিয়া। পরে সোমবার (১১ জানুয়ারি) মামলার সাক্ষী হিসেবে দুলাল মিয়াকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কলাগাবান থানার পুলিশ পরিদর্শক আ ফ ম আসাদুজামান বলেন, আনুশকাকে ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় অভিযুক্ত দিহান আদালতে ১৬৪ ধারায় যে জবানবন্দি দিয়েছে এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সাক্ষী হিসেবে দুলাল মিয়াকে হেফাজতে নিয়েছি। তাকে আদালতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। যেহেতু তিনি এই মামলার আসামি না, তাই সাক্ষ্য দেওয়া শেষে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। দুলাল আমাদের কিছু তথ্য দিয়েছেন, তবে তার সাক্ষ্য দেওয়ার স্বার্থে এখনই এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাচ্ছে না।
পুলিশি হেফাজতে দুলালের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ সূত্র জানায়, ঘটনার দিন সকাল থেকেই দুলাল দিহানদের বাসার গেইটে দায়িত্বরত ছিলেন। ওই দিন বাসায় দিহান ছাড়া আর কেউ নেই বলেও তিনি জানতো। দুপুরে দিহানদের বাসায় একটি মেয়েকে তিনি যেতে দেখেন। আনুশকা বাসার ভেতরে যাওয়ার আনুমানিক এক ঘণ্টার মধ্যে ওই মেয়েকে অচেতন অবস্থায় সঙ্গে নিয়ে দিহান বের হয়ে আসেন। এরপর গাড়িতে করে চলে যায়। আনুশকা যখন দিহানদের বাসায় যায় তখন তিনি একাই ছিল এবং তাকে হাসপাতালের নেওয়ার সময় দিহান ছাড়া আর কেউই সঙ্গে ছিলো না।
দিহানের বাসার সিসিটিভি ফুটেজসহ আশ-পাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা। দিহানের বাসার সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাসাটিতে প্রায় দেড় ঘণ্টা অবস্থান করেছিল আনুশকা। ৭ জানুয়ারি দুপুর ১২টা ১২মিনিটে কলাবাগানে দিহানের বাসার সিঁড়িঘরের দিকে যেতে দেখা যায় আনুশকাকে। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর দুপুর ১টা ৩৬ মিনিটে বাসা থেকে দিহানের গাড়ি বেরোতে দেখা যায়। এর মধ্যে দুপুর একটার দিকে ওই বাসার সামনে তিন ব্যক্তির রহস্যজনক গতিবিধি দেখা যায়। তবে তাদের চেহারা স্পষ্ট নয়।
ডিএমপির নিউমার্কেট জোনের এসি আবুল হাসান বলেন, ঘটনাস্থলের আশপাশের পুরো এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ আমরা বিশ্লেষণ করে দেখেছি। পাশাপাশি দিহানের ওই তিন বন্ধুর মোবাইল নম্বর ট্র্যাক করে ঘটনার সময় তারা কোথায় ছিল সেই লোকেশন বের করা হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে তাদের সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ায় আমরা ছেড়ে দিয়েছি। তবে তারা নজরদারির বাইরে নয়, প্রয়োজনে তাদের আবার হেফাজতে নেওয়া হবে। এছাড়া আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী দু-এক দিনের মধ্যে দিহানের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হবে বলেও জানান তিনি।
মামলার এজাহারে ও এখন পর্যন্ত মামলার তদন্তে এ ঘটনায় শুধুমাত্র দিহান জড়িত থাকার বিষয়টি উল্লেখ থাকলেও আনুশকার বাবা আল আমিন দাবি করছেন ঘটনা একা ঘটায়নি দিহান। আনুশকাকে যেভাবে পাশবিক নির্যাতন করা হয়েছে এতে আরও কেউ জড়িত রয়েছে বলেও অভিযোগ তার।
রাজধানীর সোবহানবাগে পরিবারের সঙ্গে বসবাস করতেন মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ‘ও’ লেভেলের শিক্ষার্থী আনুশকা নূর আমিন। গত ৭ জানুয়ারি কোচিংয়ের নোট আনতে যাওয়ার কথা বলে কলাবাগানে বন্ধু ইফতেখার ফারদিন দিহানের বাসায় যান।
সেখানেই ‘ধর্ষণের’ শিকার হয়ে মাত্রাতিরিক্ত রক্তক্ষরণে অসুস্থ হয়ে পড়লে আনুশকাকে নিজ গাড়িতে করে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে নিয়ে যান দিহান। হাসপাতালে ভর্তির আগেই সেখানকার চিকিৎসক আনুশকাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় একমাত্র আসামি দিহানকে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি শেষে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।