আন্তর্জাতিক লিড নিউজ

মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থান, জাতিসংঘের মহাসচিবও ক্ষুব্ধ

নিউজ ডেস্ক:

বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের ঘটনায় দেশটির সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যে কোনো প্রভাব পড়বে কি-না তা নিয়ে অনেকের মধ্যেই আলোচনা চলছে। ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিয়ানমারের সেনা অভ্যুত্থানের ঘটনায় বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যে বড় কোনো প্রভাব পড়বে না। বিনিয়োগে বড় কোনো পরিবর্তন না আসার সম্ভাবনাই বেশি বলে মনে করছেন তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারাকাত বলেন, মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানির ব্যবসা তেমন দেখি না। শুধু চাল কেনার একটা ব্যাপার মিয়ানমারের সঙ্গে আছে। কিছু অবৈধ ব্যবসা মিয়ানমারের সাথে হয়। যেগুলো কক্সবাজারে গেলে বোঝা যায়। যেটাকে বলে অবৈধ সীমান্ত বাণিজ্য। মিয়ানমারের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ। তবে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়ে ড. আবুল বারাকাত বলেন, এই সেনা অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে স্থায়ী হয়ে গেলো। কারণ যেই জেনারেল এ অগ্নিকাণ্ডগুলো ঘটিয়ে ছিলো ওই জেনারেলই এখন সেনাপ্রধান হলো। আরকানে যেসব মুসলমান রয়ে গেছে তাদের অবস্থা খুব খারাপ হবে। মুসলমান হিসেবে নয়, কারণ পলিটিক্সে ধর্মের খুব একটিভলি খেলা হয়।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, মিয়ানমারে চীন, সিঙ্গাপুর, জাপান, হংকং ও যুক্তরাজ্যের বিনিয়োগ বেশি। যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ যদি মিয়ানমারের ওপর কোনো প্রকার বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দেয়, তবে কিছু রপ্তানি ক্রয়াদেশ বাংলাদেশ পাবে। মিয়ানমারের বড় রপ্তানি বাজার চীন, থাইল্যান্ড, জাপান, ভারত, হংকং, যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ। এগুলোর মধ্যে চীন, জাপান, ভারত ও থাইল্যান্ড মিয়ানমারের ঘনিষ্ঠ। সেনা অভ্যুত্থানের পর দেশগুলো শক্ত বক্তব্য দেয়নি। তিনি আরও বলেন, সেনা অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারের বিনিয়োগে বড় কোনো পরিবর্তন না আসার সম্ভাবনাই বেশি। কারণ, চাপে থাকা মিয়ানমার সরকার ইচ্ছা করে কোনো দেশের সঙ্গে ঝামেলায় যেতে চাইবে না।

বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি বাজার বড় নয়। গত ২০১৯-২০ অর্থবছর দেশটিতে দুই কোটি ৮৩ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রপ্তানির পরিমাণ ছিলো এক কোটি ৮৮ লাখ ডলার। ব্যবসায়ীরা জানান, মিয়ানমারে মোট রপ্তানির তিন ভাগের দুই ভাগই ওষুধ। তাছাড়া মাছ, নির্মাণসামগ্রী, রাসায়নিক, কাপড়, জুতা ইত্যাদি পণ্য রপ্তানি হয়। তার বিপরীতে চাল, ডাল, পেঁয়াজ, পাথরসহ বিভিন্ন পণ্য মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ-মিয়ানমার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি এস এম নূরুল হক বলেন, দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য একটি পদ্ধতির মাধ্যমে হয়ে আসছে। যে সরকারই আসুক না কেন, তা চলমান থাকবে। সেনা অভ্যুত্থানের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য কিছুটা বাধাগ্রস্ত হলেও বড় ধরনের সমস্যা হবে না। কারণ, প্রয়োজনের কারণেই উভয় দেশ আমদানি-রপ্তানি করছে।

মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের অফিসিয়ালি খুব একটা ব্যবসা নেই জানিয়ে এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ড. মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, মূলত যেটা হয় তা হচ্ছে মাদক ব্যবসা। মাদক ব্যবসা চলতে থাকবে। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) সতর্ক থাকবে। তাতে মাদক ব্যবসা কমে যাবে বলে আশা করা যায়। তিনি আরও বলেন, মিয়ানমারের সেনা সরকারের কার্যক্রম প্রথমে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। রোহিঙ্গাদের ফেরাটা আরও দেরি হবে। কারণ রোহিঙ্গাদের ওপর যে অত্যাচার হয়েছিল সেটা সেনাবাহিনীই করেছিল। তারা রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে আগ্রহী হবে বলে আমার মনে হয় না।

মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি ও তার ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতাকে আকস্মিকভাবে গ্রেপ্তার করে দেশটির সেনাবাহিনী। তারা দেশটিতে এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। এই ঘটনার পর তাৎক্ষণিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র সতর্ক করে বলেছে, সু চিসহ অন্যদের ছেড়ে না দিলে দায়ী কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে তারা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কয়েকটি দেশও সেনা অভ্যুত্থানের প্রতিবাদ করেছে। জাতিসংঘের মহাসচিবও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

Related Posts