জাতীয় লিড নিউজ

করোনা ও উপসর্গ নিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪ দিনে ৩২ জনের মৃত্যু

সিনিউজ ডেস্ক

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে করোনা ও উপসর্গে চার দিনে ৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে শনাক্তের হার। এতে বাড়ছে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা।

এ অবস্থায় জেলাকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে সংশ্লিষ্ট দফতর বিভিন্ন প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। যাতে সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা না বাড়ে। এজন্য সবাইকে স্বাস্থ্যবিধিসহ বিভিন্ন দিকনির্দেশনা কঠোরভাবে পালনের আহ্বান জানান চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তারা।

রামেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, করোনা ও উপসর্গে ২৪ মে ১০ জন, ২৫ মে চারজন, ২৬ মে চারজন, ২৭ মে চারজন ও ২৮ মে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

রাজশাহী জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্র জানায়, ২৪ মে আক্রান্তের হার ছিল ৩৩ শতাংশ, ২৫ মে ২২.৬৮ শতাংশ, ২৬ মে ১৮.০৩ শতাংশ, ২৭ মে ৪২ শতাংশ এবং ২৮ মে ৫২.৫ শতাংশ।

রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় যে ১০ জন মারা গেছেন; তাদের মধ্যে চারজনের করোনা পজিটিভ ও বাকি ছয়জনের উপসর্গ ছিল। উপসর্গ থাকা ব্যক্তিদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। পরীক্ষার আগেই মারা যান তারা। এদের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাঁচজন, রাজশাহীর তিনজন, নাটোরের একজন ও কুষ্টিয়ার একজন।

রামেক হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস বলেন, শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ড ও আইসিইউতে ১৭৭ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদের মধ্যে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৭১ জন। আইসিইউতে আছেন ১৩ জন।

রামেক হাসপাতালের কয়েকজন চিকিৎসক জানান, কয়েকদিনের ব্যবধানে আবারও করোনা রোগী বেড়েছে। সঙ্গে মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়েছে। দিনে দিনে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। আক্রান্তদের জায়গা দেওয়া যাচ্ছে না। এভাবে চললে অবস্থা প্রকট হতে পারে।

তারা জানান, এখনও চাঁপাইনবাবগঞ্জের অনেক মানুষ গোদাগাড়ী উপজেলার বিভিন্ন জায়গা দিয়ে রাজশাহী শহরে আসছে। এদিকে কঠোর নজরদারি রাখতে হবে। সংক্রমণ না কমা পর্যন্ত বিষয়টির ওপর আরও গুরুত্ব দিতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে।

আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের করোনা রোগী রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। ফলে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক এবং স্থানের সংকট দেখা দিতে পারে। তাই সদর হাসপাতাল ও মিশন হাসপাতালে রোগী রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা দূর করে রোগীদের সেবায় সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে একযোগে কাজ করতে হবে।

শামীম ইয়াজদানী বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের করোনা রোগীর সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক এবং জায়গার সংকট দেখা দিয়েছে। এ মুহূর্তে উপজেলায় কর্মরত চিকিৎসকদের দিয়ে চিকিৎসাসেবা চালাতে হবে। পাশাপাশি চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাড়তি রোগীদের জন্য মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নাক, কান ও গলা ইউনিটকে সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করে সেখানে করোনা রোগীদের রাখার চিন্তা করছি আমরা।

শুক্রবার (২৮ মে) রাজশাহী জেলার করোনার তথ্য জানিয়ে সিভিল সার্জন মো. কাইয়ুম তালুকদার বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ১১৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে আট হাজার ৫৯৭ জন আক্রান্ত হলেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩ জনসহ এ পর্যন্ত সাত হাজার ৩৩৬ জন সুস্থ হয়েছেন। মারা গেছেন ৮২ জন। চিকিৎসাধীন রয়েছেন এক হাজার ১৭৯ জন।

তিনি আরও বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেসব চিকিৎসক রয়েছেন সেসব চিকিৎসককে রামেক হাসপাতালে অ্যাটাচমেন্টসহ বিভিন্ন বিষয়ে ঢাকায় যোগাযোগ করছি। আবার সেখান থেকে রামেক হাসপাতালে চিকিৎসক নিয়ে এলে উপজেলা পর্যায়েও চিকিৎসক সংকট হতে পারে। তাই সবকিছু বিবেচনা করে আমাদের পদক্ষেপ নিতে হবে।

রাজশাহীর জেলা প্রশাসক (ডিসি) আব্দুল জলিল বলেন, রিপিট টেস্ট বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আরএমপি পুলিশ কমিশনার, রাজশাহী সিভিল সার্জন ও সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এছাড়া ভারেফেরত ব্যক্তিদের জন্য রাজশাহীতে ১৩ সদস্যের ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক বিভিন্ন কোয়ারেন্টিন সেন্টারসমূহ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা ও দেখভাল করবেন কমিটির সদস্যরা।

রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুহাম্মদ শরিফুল হক বলেন, ভারতফেরত যেসব ব্যক্তি প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে আছেন; তাদের মধ্যে কারও করোনা পজিটিভ হলে সিভিল সার্জন ও রামেক হাসপাতালের পরিচালকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় ২৭৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহীর ১১৪ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৩৯ জন, নওগাঁর ২৬ জন, নাটোরের ৪৪ জন, জয়পুরহাটের ১৮ জন, বগুড়ার ১৭ জন, সিরাজগঞ্জের সাতজন ও পাবনার ১১ জন।

Related Posts