চট্টগ্রাম লিড নিউজ

এলাকার সমাজসেবক,মূলত পিতা পুত্র ভয়ংকর পেশাদার ডাকাত !

 

নিজস্ব প্রতিবেদক

এলাকায় মোঃ নুর নবীর (৩০) পরিচয় সংগঠক ও সমাজ সেবক হিসেবে। কিন্তু পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে আন্তঃজেলা ডাকাত দলের প্রধান হিসেবে! মাত্র ৯ মিনিটেই লাখ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নুর নবী বাহিনী। বাধা দিলে হত্যা করতেও পিছপা হয় না তারা! তাদের ডাকাতিতে বাধা দিয়ে এ পর্যন্ত ২ জন নিহত হয়েছেন। ৭ বছরে ১০ জেলায় ৩০ টি ঘটনায় ১০ কোটি টাকার সিগারেট লুট করেছে নুরুর বাহিনী।
ডবলমুরিংয়ে আবুল খায়ের গ্রুপের একটি গুদাম থেকে লুট করা ৩৩ লাখ টাকার সিগারেট উদ্ধার ও মূল হোতা আন্তঃজেলা ডাকাত দলের প্রধান নুর নবীসহ ৩ জন গ্রেফতারের পর পাওয়া যায় চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য। গ্রেফতার বাকি দুইজন হলেন – কুমিল্লা সদরের পশ্চিম বাগিছাগাঁও গ্রামের মৃত আব্দুল খালেকের ছেলে মোঃ শাহজাহান (৬০) এবং তার ছেলে মোঃ এনায়েত উল্লাহ শান্তকে। তন্মধ্যে শান্ত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্সের শিক্ষার্থী। নুর নবীকে সীতাকুণ্ড এবং বাকি দুইজনকে কুমিল্লা থেকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে ৯২ কার্টন সিগারেট এবং দুই কার্টন বিক্রিলব্ধ ৬৮ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।

দুর্ধর্ষ এই ডাকাত গ্রেফতার ও লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধারে বিস্তারিত জানাতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে ব্রিফ করেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ কমিশনার জনাব মোঃ আব্দুল ওয়ারীশ। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন নগর গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত উপ কমিশনার জনাব নোবেল চাকমা, সহকারী কমিশনার জনাব গোলাম সরোয়ার, পশ্চিম জোনের সহকারী কমিশনার জনাব মোঃ মাহামুদুল হাসান মামুন,ডবলমুরিং থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন, ইন্সপেক্টর প্রিটন সরকার, উপ পরিদর্শক অর্নব বড়ুয়া, কিশোর মজুমদার, শরীফ উদ্দিন, মোহাম্মদ তারেক আজিজ, এইচ এম ওয়াহিদুল্লাহ প্রমুখ।
মোঃ আব্দুল ওয়ারীশ বলেন, ‘নুর নবী আন্তঃজেলা ডাকাত দলের প্রধান। তারা মোট ২০/২৫ জনের আন্ত জেলা ডাকাত গ্যাং। নুর নবী প্রধান। ডাকাতির আগে তারা রেকি করে। এরপর অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ডাকাতি করে। ‘
নগর গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত উপ কমিশনার নোবেল চাকমা বলেন, ‘নুর নবী বাহিনী শুধুমাত্র সিগারেট ডাকাতি করে। সিগারেট সব এক জায়গাতেই মজুদ থাকে আবার এগুলো বিক্রিও খুব সহজেই করা যায়। তাই তারা শুধু সিগারেটই লুট করে। সাধারনত তারা ২০ লক্ষ টাকার মালামাল টার্গেট করে। এর নীচে করলে তাদের পোষায় না!’ তিনি জানান, এরই ধারাবাহিকতায় তারা চট্টগ্রামের চান্দগাঁও কামাল বাজার এলাকার রফিক স্টোরে ২৫ লাখ টাকা মূল্যের ৭৩ কার্টন, সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারি আফজাল হোসেনের ২২ লাখ টাকা মূল্যের ৬৩ কার্টন ও নগদ প্রায় দেড় লাখ টাকা, চাঁদপুর কচুয়ার সাইফুল স্টোর ২২ কার্টন ও নগদ সাড়ে ৪ লাখ, ডবলমুরিংয়ের খাজা ট্রেডার্সের ৩২ লাখ ৯০ হাজার টাকা মূল্যমানের ৯৪ কার্টন, টেকনাফে ২২ লাখ টাকার সিগারেট লুট করে নুর নবীর চক্র। এছাড়াও
পতেঙ্গা থানা এলাকার আকিজ বিড়ি গোডাউন, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, কুড়িগ্রাম, সিলেট, সাভার, ঢাকা, রাউজান, মুন্সীগঞ্জ জেলাসহ মোট ০৭ বছরে ১০ জেলায় ৩০ টি ঘটনায় ১০ কোটি টাকার সিগারেট লুট করেছে। শুধু এই বছরেই ৬ ঘটনায় কোটি টাকার উপরে সিগারেট লুট করেছে নুর নবীর বাহিনী।
ডবলমুরিং থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন বলেন, ‘ আন্তঃজেলা ডাকাত দলের প্রধান নুর নবী পুলিশের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকাভুক্ত। এই চক্র খুবই ভয়ংকর। তাদের ডাকাতিতে বাধা দিলেই গুলি ছোঁড়ে, ছুরিকাঘাত করে, ক্ষেত্রবিশেষে হত্যাও করে! এ পর্যন্ত তাদের হাতে খুন হয়েছে ০২ জন। একটি ডাকাতি করতে তাদের সময় লাগে মাত্র ৯ মিনিট। ‘
তিনি আরও জানান, নুর নবী নিজ এলাকায় সংগঠক ও সমাজ সেবক হিসেবে পরিচিত। সে মোট তিনটি বিয়ে করেছে। এখন সিগারেট ডাকাতি করলেও চুরির শুরু হয়েছিল তার গরু চুরির মাধ্যমে!
এদিকে নুর নবীর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পিতা- পুত্র শাহজাহান- শান্তকে গ্রেফতার করা হয়। এই দুইজন মূলত নুর নবী চক্রের লুট করা সিগারেট স্বল্পমূল্যে কিনে। সর্বশেষ প্রায় ৩৪ লাখ টাকার সিগারেট তারা কেনেন মাত্র ১৯ লাখ টাকায়। শান্ত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্সের শিক্ষার্থী। গ্রেফতার তিনজনকেই ৩ দিনের রিমাণ্ডে আনা হয়েছে।

Related Posts