চট্টগ্রাম

ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল শিশুর মৃত্যুর হার হ্রাস করে, জেলা পর্যায়ে  ক্যাম্পেইনের  উদ্বোধন

 

নিজস্ব প্রতিবেদক

সারাদেশের ন্যায় চট্টগ্রাম জেলা পর্যায়েও সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনুষ্টিত হচ্ছে দুই সপ্তাহব্যাপী (৫-১৯ জুন) জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন-২০২১। আজ  শনিবার সকালে নগরীর আন্দরকিল্লাস্থ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল আউটডোরে ইপিআই কেন্দ্রে একটি শিশুকে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাইয়ে দিয়ে চট্টগ্রাম জেলা পর্যায়ে ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইনের আনুষ্টানিক শুভ উদ্বোধন করেন ঢাকার মহাখালীস্থ জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দিন মাহমুদ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর।
জেলা সিভিল সার্জন ও ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত¡াবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বির সভাপতিত্বে অনুষ্টিত জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইনের উদ্বোধনী অনুষ্টানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইউনিসেফ’র চট্টগ্রামস্থ নিউট্রিশন অফিসার ডা. উবাসুই চৌধুরী, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের জেলা স্বাস্থ্য তত্ত¡াবধায়ক সুজন বড়–য়া, ইপিআই টেকনোলজিস্ট কাজল কান্তি পাল, পরিসংখ্যানবিদ গীতা উশ্রী দাশ, স্যানিটারী ইন্সপেক্টর সম্পদ দে, স্বাস্থ্য পরিদর্শক একরামুল হক চৌধুরী, সিনিয়র স্টাফ নার্স নুরুন্নাহার, সিনিয়র স্টাফ নার্স করবী দাশ, অফিস সহকারী তাপস রায় ও হিসাব রক্ষক ফোরকান উদ্দিন। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের অধীন স্বাস্থ্য অধিদফতরের জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্টান ও পুষ্টি সেবার বাস্তবায়নে এ ক্যাম্পেইনের আয়োজন করা হয়। অনুষ্টানে জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথিবৃন্দরা বলেন, ১৯৭৪ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ কর্মসূচীর শুভ সূচনা করেন। ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল শিশুর অপুষ্টি, রাতকানা রোগ প্রতিরোধ, দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি নিশ্চিত, হাম, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়াজনিত মৃত্যুর হার হ্রাসসহ সকল ধরণের মৃত্যুর হার হ্রাস করে। সরকারের সকল মন্ত্রনালয়ের সমন্বয়ের মাধ্যমে জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা হয়ে থাকে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষনতায় করোনা মোকাবিলায় সক্ষম হচ্ছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতায় করোনাকালীন এই কঠিন সময়ে দুই সপ্তাহব্যাপী ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন বাস্তবায়ন অত্যন্ত প্রশংসনীয়।
তারা আরো বলেন, কোন শিশু যাতে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাসসুল খাওয়া থেকে বাদ না পড়ে সে লক্ষ্যে জেলার প্রত্যেক উপজেলা সদর ও ইউনিয়ন পর্যায়ে জনগণকে জানান দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি মসজিদ, হাটবাজার, বাস স্ট্যান্ড, নৌ-ঘাটসহ গুরুত্বপূর্ণস্থানেও ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইনের প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়েছে। সরকারী প্রতিষ্টান, জনপ্রতিনিধি, আনসার-ভিডিপি ও এনজিও সংস্থাগুলো ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইনের কাজে নিয়োজিত রয়েছে। ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইনের যে কোন ধরণের অপপ্রচার ও গুজব রোধে প্রশাসন সতর্ক রয়েছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কন্ট্রোল রুম খোলা রাখা হয়েছে। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পাশাপাশি স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের বিশেষ টিমগুলো ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন মনিটরিং করছেন। মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমেও এ কার্যক্রম মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে।
জেলা সিভিল সার্জন ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত¡াবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি জানান, চট্টগ্রাম জেলার ১৫ উপজেলায় ২’শ ইউনিয়নের ৬’শ ওয়ার্ড, ১৫টি স্থায়ী কেন্দ্র, ১৫টি ভ্রাম্যমান কেন্দ্র ও ৪ হাজার ৮’শ অস্থায়ী কেন্দ্রে মোট ৭ লাখ ৯০ হাজার ৫০৪ জন শিশুকে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ৬-১১ মাস বয়সী ৮৯ হাজার ৪৩৯ জন শিশুকে একটি নীল রঙের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল (১ লক্ষ আই.ইউ) ও ১২-৫৯ মাস বয়সী ৭ লাখ ১ হাজার ৬৫ জন শিশুকে একটি লাল রঙের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল (২ লক্ষ আই.ইউ) খাওয়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ক্যাম্পেইন সফল করতে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহন করেছে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়। আজ ৫ জুন শনিবার থেকে ১৯ জুন শনিবার পর্যন্ত শুক্রবার ব্যতীত প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত উপজেলাগুলোতে ৫১ জন স্বাস্থ্য পরিদর্শক, ১৫৬ জন সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক, ৫৫৭ জন স্বাস্থ্য সহকারী, ৬৮৬ জন পঃ পঃ সহকারী, ১৫৩ জন পঃ পঃ পরিদর্শক, ৯ হাজার ৬৬০ জন স্বেচ্ছাসেবক, ১৫ জন স্যানিটারী ইন্সপেক্টর, ৫১৭ জন সিএইচসিপি ও ৮৪ জন স্যাকমো নিয়োজিত থাকবে। যে সব স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সপ্তাহে দুই দিন ইপিআই কার্যক্রম চলমান রয়েছে সেখানে ৪ দিন ও ইপিআই কার্যক্রম নেই এমন কেন্দ্রগুলোতে শিশুদেরকে সপ্তাহে ৬ দিন ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে।
তিনি জানান, ২০২০ সালের ১১ জানুয়ারী অনুষ্টিত জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইনে ৬-১১ মাস বয়সী মোট ৮৫ হাজার ৮৯ জন শিশুকে একটি নীল রঙের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়েছিল যার অর্জিত হার ৯৯ শতাংশ এবং ১২-৫৯ মাস বয়সী মোট ৬ লাখ ৮০ হাজার ৩৯৭ জন শিশুকে একটি লাল রঙের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়েছিল যার অর্জিত হার ৯৮.৯৮ শতাংশ। ####

Related Posts