নিজস্ব প্রতিবেদক:
চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে গৃহবধু ইয়াছমিন আকতার এ্যানী (২৪) হত্যায় গ্রেফতার প্রধান আসামি বাবলু দে জবানবন্দিতে গুরুত্বপূর্ণ ও চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে।
গত ২১ আগস্ট সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (বন আদালত) বেগম আঞ্জুমান আরা’র আদালতে প্রধান আসামী বাবলু দে স্বীকারোক্তিমূলক এ জবানবন্দি দেন।
আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তীতে বাবলু দে জানায়, ০৩ আগস্ট। দুপুর আড়াইটার দিকের ঘটনা। ২০১৫ সালে আমি বান্দরটিলা জব করতাম। তখন ইয়াছমিন আক্তার এনির সাথে আমার মাত্র পরিচয়। তখন আমাদের দুজনের মধ্যে একটা সম্পর্ক হয়। ২০১৭ সালে ডিসেম্বরে আমরা কালি মন্দিরে বিয়ে করি। তারপর আমরা একটা ভাড়া বাসা নিই।
নগরীর বাহার সিগন্যালে এক বছরের কাছাকাছি থাকি। পড়ে আমার স্ত্রী গর্ভবতী হলে গ্রামের বাড়ি চলে যায়। পরে আমাদের একটা মেয়ে সন্তান জন্মগ্রহণ করে। আমি সপ্তাহে বাড়ি আসা যাওয়া করি। পরে স্ত্রী তাকে শহরে নিয়ে আসতে বলে। আমি রাজী হই নাই আনতে। রাজি না হওয়ায় আমাদের মধ্যে তর্ক বিতর্ক হয়। তারপর রাগের মাথায় বউকে জোরে তাপ্পড মারি। তখন সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। তখন মুখে চোখে আমি পানি দেই। পরে ডাক্তার আসে, ডাক্তার এসে বলে সে মারা গেছে। আমাদের বাড়ির পাশের ফার্মেসির ডাক্তার। পরে ডাক্তার চলে যায়।’
আমি পরে আমার বন্ধু সুমনদে কে ফোন করে একটা সিএনজি আনি। বউকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যেতে। গিয়ে অর্ধেক রাস্তা থেকে আবার বাড়িতে যাই। পরে আমি এলাকার মেম্বার চেয়ারম্যান মাতব্বরকে বিষয়টি জানাই। আর এ্যানির বড় বোনকে ফোনে জানাই। বলেছি এ্যানি স্ট্রোক করে মারা গেছে। তারা বলে লাশ রাখার জন্য। কিন্তু মেম্বার চেয়ারম্যান বলে লাশ পুড়িয়ে ফেলতে। পরে পুড়িয়ে ফেলি। পরে পুলিশকে মেম্বার চেয়ারম্যান খবর দেয়। আমি ইচ্ছা করে মারিনি কিভাবে হয়েছে জানি না। এটাই আমার জবানবন্দি।’
গত ৩ আগস্ট ইয়াসমিন আক্তার এ্যানীকে বোয়ালখালীর খরনদ্বীপ জৈষ্ঠপুরা বাড়ীতে হত্যা করে লাশ পুড়িয়ে ফেলে তার স্বামী বাবলু দে।
এনিয়ে গত ১৬ আগস্ট, চট্টগ্রাম চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি সিআর মামলা (নং-১২৯/২০২১) দায়র করেন। মামলায় স্বামী বাবলু দে ও এলাকার চেয়ারম্যান মেম্বারসহ ১৮ জনকে আসামী করা হয়। বোয়ালখালী থানার মামলা নং-২১ (৮) ২১।
বোয়ালখালী উপজেলার জৈষ্ঠপুরা গ্রামের অন্যান্য আসামিরা হলেন-চট্টগ্রাম বোয়ালখালী উপজেলার ৮নং শ্রীপুর খরণদ্বীপ ইউনিয়নের রতন চৌধুরী (৪৯), সাধন মহাজন (৬০), নিমাই দে (৪৫), শংকর দত্ত (৩৩), অরবিন্দ মহাজন (৫০), অরুন দাশ (৫০), দিলীপ দেব (৪৫), প্রদীপ সুত্রধর (৪০), রাম প্রসাদ (৩৮), রনি দে (৩০), অরুপ মহাজন (৪২), সমর দাশ (৫৫), রবীন্দ্র ধর (৬০), নিপুন সেন (৬০), মো. মোকারম চেয়ারম্যান, ইউসুফ প্রকাশ ড্রেজার ইউসুফ (৩৫) ও পবন দাশ (৫৫)।
মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জিয়া হাবিব আহসান বলেন, ‘বাদী আর্থিকভাবে দুর্বল হওয়ায় মানবাধিকার সংগঠন বিএইচআরএফের সহায়তায় মামলা দায়ের করা হয়।’
এ ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে প্রধান আসামিকে। তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। ঘটনায় জড়িত অন্যদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।’
মামলার বাদী রোকসানা বেগম বলেন, ‘পুলিশ অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতার করতে পারছে না। উল্টো আসামিরা মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছে। এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য নানাভাবে চাপ দিচ্ছে। হত্যাকারীরা বোয়ালখালীতে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ফলে আমরা আতঙ্কে দিন পার করছি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বোয়ালখালী থানার ওসি আব্দুল করিম বলেন, ‘পুড়িয়ে মেরেছে এটা সত্য নয়। এ রকম অদ্ভুত কথা কে বলেছে। একজন হিন্দু ছেলে মুসলিম মেয়েকে বিয়ে করেছে। পরে মেয়েটি হিন্দু হয়েছে। মেয়েটি মারা গেলে ঐ ছেলে নিয়মানুসারে সৎকার করেছে।’
ওসি আরো বলেন, মামলা হওয়ার প্রধান আসামিকে ধরা হয়েছে। আদালতে তিনি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। বাকি আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরছে এটাও সত্য নয়। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে। ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধরা হবে।’
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পটিয়া সার্কেল) তারিক রহমান এর সাথে যোগাযোগ করেও কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।