হঠাৎ করে পেঁয়াজ ও আলুর দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়াসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের উর্ধ্বগতি রোধকল্পে মহানগর ও উপজেলাগুলোতে প্রয়োজনে সাড়াশি অভিযান পরিচালনা করা হবে। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য অবৈধভাবে মজুদ কিংবা এসব পণ্যের কৃত্রিম সংকটের মাধ্যমে দাম বাড়িয়ে বাজার অস্থির করলে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে জেল-জরিমানার পাশাপাশি কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রয়োজনে পণ্য জব্দ, আড়ত ও দোকান সিলগালা করে দেয়া হবে। আজ ১০ ডিসেম্বর রোববার সকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক (ডিসি)ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান সভায় সভাপতিত্ব করেন।
গত ১২ নভেম্বর জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভা অনুষ্ঠানের পর থেকে হরতাল-অবরোধ চলাকালীন সময় যানবাহনে আগুন দেয়া বা গাড়ী পোড়ানোর ঘটনা এ জেলায় ঘটেনি, জেলায় যানবাহন চলাচল স্বাভবিক ছিল-বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ আবদুল মান্নানের এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক এ জন্য সকল পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠন, র্যাব-পুলিশ, বিজিবি, আনসারসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেলা পুলিশ সুপার এস.এম শফিউল্লাহ বিপিএম (সেবা), সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী, মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমদ, জেলার ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম সরওয়ার কামাল দুলু, চেম্বার পরিচালক অহিদ সিরাজ চৌধুরী স্বপন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ আবদুল মান্নান, উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা স্বজন কুমার তালুকদার (রাঙ্গুনিয়া), একেএম এহেছানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল (রাউজান), তৌহিদুল হক চৌধুরী (আনোয়ারা), চৌধুরী মোঃ গালিব সাদলী (বাঁশখালী), ফারুক চৌধুরী (কর্ণফুলী), উপজেলা নির্বাহী অফিসারবৃন্দ, সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, প্রতিনিধি ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় ডিসি বলেন, পেঁয়াজ ও আলুর দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় তা রোধকল্পে তাৎক্ষণিক জেলা প্রশাসনের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে চট্টগ্রামে এসব পণ্যের পাইকারী বাজার চাকাতাই-খাতুনগঞ্জ ও পাহাড়তলী বাজারে অভিযান পরিচালনা করার ব্যবস্থা করা হয়। তাছাড়া উপজেলাগুলোতে সকল উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ প্রদান করা হয়। সকল উপজেলাতে ইউএনও কর্তৃক সংগে সংগে সংশ্লিষ্ট বাজারগুলোতে অভিযান পরিচালনা করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
সভায় উপস্থিত জনপ্রতিনিধি ও চেম্বার অব্ কমার্সের প্রতিনিধিসহ সকলের মতামতের ভিত্তিতে সকল আমদানীকারকদের নিয়ে জরুরী ভিত্তিতে একটিি সভা আহবান করে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
সভায় মালিমিডিয়ার মাধ্যমে বিগত নভেম্বর/২৩ মাসের খাতওয়ারী অপরাধ চিত্র তুলে ধরেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মামুনুর রহমান।
জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি রোধে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যবস্থা নিয়ে হঠাৎ পেয়াজ আলুসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি রোধকল্পে ব্যবসায়ীমহল কর্তৃক রক্ষিত স্ব-স্ব গুদাম বা গোডাউনের হালনাগাদ তথ্য প্রদানের জন্য একটি ‘গণবিজ্ঞপ্তি’ প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারদেরকে নির্দেশনা দেয়া হয়। গণবিজ্ঞপ্তি প্রচারের পর সুনির্দিষ্ট গোডাউন বা গুদাম ব্যতীত অন্য কোন জায়গায় এসব পণ্যের গুদামজাত করার তথ্য পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে জেলসহ শাস্তির আওতায় আনার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে মর্মে হুশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়।
এ ছাড়া জেলা প্রশাসক ভোক্তা সাধারণকে এসব পণ্য ১-২ কেজির অধিক ক্রয় করে সংকট সৃষ্টি না করার জন্যও অনুরোধ করেন।
এ প্রসংগে ৮-বিজিবির কমান্ডিং অফিসার বলেন, ব্যবসায়ী মহল হতে গুদামের প্রাপ্ত তালিকার বাইরে অন্য কোন স্থানে গুদামজাত করছে কিনা সেটা তাদের গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে তদারকি করবেন মর্মে সভাকে জানিয়েছেন। ৮ বিজিবি কর্তৃক ইয়াবা তৈরির সরঞ্জাম সীতাকুন্ড উপজেলা থেকে উদ্ধার করায় কমান্ডিং অফিসারের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট বিজিবি সদস্য, ইউএনও, সীতাকুন্ড এবং সংশ্লিষ্ট পুলিশ বাহিনী, গোয়েন্দা সদস্যসহ সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
সভায় জেলা পুলিশ সুপার চট্টগ্রাম বলেন,চেম্বার অব্ কমার্স কর্তৃক ব্যবসায়ীদেরকে নিয়ে সভা আহবানপূর্বক প্রেস ব্রিফিং এর মাধ্যমে দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টিকারীদের চিহ্নিত করণের ব্যবস্থা করতে পারেন। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা রয়েছে, এছাড়া আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার কার্যক্রম চলমান থাকবে মর্মে সভাকে অবহিত করেন।
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনের রেখে অস্ত্রধারী, সন্ত্রাসীরা প্রার্থীদের পক্ষে প্রভাব বিস্তারের জন্য বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশংকা করেন, এ প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্টদেরকে সজাগ ও সতর্ক থাকার অনুরোধ করেন এবং অবৈধ মোটর সাইকেলের বিরুদ্ধে পুলিশ, র্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসমূহ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।###