গান গাইতে গাইতে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখা এক যুবককে পিটিয়ে মারার ঘটনায় ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ।
মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার কাজী মো. তারেক আজিজ।
তিনি বলেন, সিএমপি কমিশনার কার্যালয়ের মিডিয়া সেন্টারে বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টায় এ বিষয়ে প্রেস ব্রিফিং করা হবে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- ফরহাদ আহমেদ চৌধুরী জুয়েল (৪২), আনিসুর রহমান ইফাত (১৯) ও ১৬ বছর বয়সী এক কিশোর।
পুলিশ জানায়, গত ১৩ আগস্ট রাতে নগরীর পাঁচলাইশ থানাধীন ২ নং গেইটস্থ ট্রাফিক চত্বরে ছিনতাইকারী সন্দেহে হাত-পা বেঁধে এবং ট্রাফিক পোস্টের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে গান গেয়ে গেয়ে বেধড়ক মারপিট করে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় শাহাদাত হোসেনকে (২৪)। হত্যার পর অপকর্ম গোপন করার জন্য গত ১৪ আগস্ট রাতের অন্ধকারে শাহাদাতের মরদেহ পাঁচলাইশ মডেল থানাধীন বদনাশাহ মাজারসংলগ্ন রাস্তার সামনে ফেলে দেয়া হয়। পাঁচলাইশ থানা পুলিশ ওইদিন সন্ধ্যায় মরদেহ উদ্ধার করে চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশ মৃতের ময়নাতদন্ত সমাপ্ত করে তার পরিবারের নিকট লাশ হস্তান্তর করে। এরপর মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় মামলা দায়ের করা হয়।
পুলিশ আরও জানায়,এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ২১ আগস্ট থেকে পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে প্রচারিত হলে তা ভাইরাল হয়ে পড়ে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিন্দার ঝড় উঠে। ভাইরাল হওয়া ভিডিয়োর সূত্র ধরে গোপন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় উক্ত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় “চট্টগ্রাম ছাত্র জনতা ট্রাফিক গ্রুপ” নামে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ শনাক্ত করা হয়। সেই সূত্র ধরে গ্রুপটির অ্যাডমিন ও হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা ফরহাদ আহমেদ চৌধুরী প্রকাশ জুয়েল (৪২)-কে শনাক্ত করা হয়। গোপন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় পাঁচলাইশ থানার একটি টিম উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) মোহাম্মদ ফয়সাল আহম্মেদের (অতিরিক্ত ডিআইজি) নির্দেশনায় অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ মঙ্গলবার বিকালে ২ নং গেইট সংলগ্ন বিপ্লব উদ্যান এলাকা থেকে ফরহাদ আহমেদ চৌধুরী জুয়েলকে(৪২)গ্রেফতার করে। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে উক্ত ‘‘চট্টগ্রাম ছাত্র জনতা ট্রাফিক গ্রুপ’’-এর সক্রিয় সদস্য এবং হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সক্রিয় অংশগ্রহণকারী এবং ভিডিও ফুটেজে দৃশ্যমান শাহাদাতের গাল চেপে ধরে ব্যঙ্গাত্বকভাবে মন্তব্য করা ‘‘এ ভাইয়া সবাই একটা একটা সেলফি তুলে চলে যান ” বলা মো. সালমানকে (১৬) শনাক্ত করে সিএমপি চকবাজার থানাধীন শিল্পকলা একাডেমির সামনে থেকে একই দিন সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার করা হয়।
তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ‘চট্টগ্রাম ছাত্র জনতা ট্রাফিক গ্রুপের সক্রিয় সদস্য এবং একই দিন রাতে ২ নং গেইট সংলগ্ন মসজিদ গলি থেকে আনিসুর রহমান ইফাত (১৯)-কে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হত্যাকাণ্ডের বিবরণসহ নিজেদের সক্রিয় থাকার কথা স্বীকার করে পুলিশ জানিয়েছে।
এর আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ২০ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, গান গাইতে গাইতে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখা এক যুবককে পিটিয়ে মারছে কয়েকজন ব্যক্তি। গত ১৪ আগস্ট এ ঘটনা ঘটলেও জানাজানি হয় সম্প্রতি।
মারধরে মৃত্যুবরণকারী যুবকের নাম মো. শাহাদাত হোসেন (২৪)। তাঁকে নগরের আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারের নিচে ২ নম্বর গেট এলাকায় বেঁধে রাখা হয়েছিল।
তিনি নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি থানাধীন পাঁচবাড়িয়া ইউনিয়নের নদনা গ্রামের বাসিন্দা। তার পিতা ওই এলাকার মিয়া জান ভূঁইয়া বাড়ির মৃত মোহাম্মদ হারুন।
শাহাদাত নগরের বিআরটিসি এলাকার বয়লার কলোনিতে থাকতেন এবং ফলমণ্ডিতে একটি দোকানে চাকরি করতেন। ১৪ আগস্ট রাতে প্রবর্তক এলাকা থেকে পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় ১৫ আগস্ট শাহাদাতের চাচা মো. হারুন বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন।