চট্টগ্রাম নির্বাচন

আইনি বাধা না থাকলে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেঃ সিইসি

নিজস্ব প্রতিবেদক
আইনি বাধা না থাকলে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশ নিতে পারা না পারার বিষয়ে কমিশনের কোনো হাত নেই। আদালত কিংবা সরকার নিষেধাজ্ঞা না দিলে দলটির নির্বাচনে অংশগ্রহণে কোনো বাধা নেই।
সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসের সম্মেলন কক্ষে মতবিনিময় সভার আগে সাংবাদিকদের সামনে তিনি আরও বলেন, ৭২ সাল থেকে আওয়ামী লীগ নিবন্ধিত একটি দল। এসময় তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশন এখন সম্পূর্ণ স্বাধীন।
তিনি বলেন, এবার আগের মতো ভোট হবে না। বিগত ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের মতো সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। এজন্য সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। রাজনৈতিক দল আমাদের সাথে থাকার কথা নয়। ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য জাতির কাছে ভোটের অধিকারসহ সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবী ও প্রতিশ্রæতি দিয়েও গত ১৫/১৬ বছর রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃবৃন্দরা জেল খেটেছে, প্রাণ দিয়েছে, আমরা সে কাজটি করে দেব, এটাই জাতির কাছে আমাদের ওয়াদা। আগের মতো রাতের অন্ধকারে আর ভোট হবে না, এটা কেউ কামনা করেনা। ৫ আগস্ট পরবর্তী জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি হয়েছে, এখানে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে কেউ বিরোধিতা করেনি, সবাই একমত। তাই আশাকরি বিগত ১৯৯১, ৯৬ ও ২০০১ সালের মতো গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে পারবো। সবার সহযোগিতা নিয়ে এটাকে আমরা বাস্তবায়ন করবো।
আওয়ামী লীগের নির্বাচনে আসা-না আসা প্রসঙ্গে সিইসি এ,এম,এম নাসির উদ্দিন বলেন, এটা নিয়ে রাজনীতির মাঠে ব্যাপক বিতর্ক চলছে। আমি ইতোপূর্বে মিডিয়াতে অনেকবার বলেছি যে, এটা মূলতঃ রাজনৈতিক সিদ্ধান্তই হবে। এ দল যাতে আগামীতে নির্বাচনে আসতে না পারে, এজন্য কেউ কেউ আদেশ চেয়ে না কি কোর্টে মামলা করেছে, এ ধরণের শোনা যাচ্ছে। কোর্টের রায় যেভাবে যায়, সেভাবে ব্যবস্থা নেব। দল করার অধিকার সবারই আছে, কোন দল আলাদা রেজিস্ট্রেশন পাবে কি না সেটার আলাদা বিধি-বিধান রয়েছে, আমাদের শর্ত পূরণ হলে দেব, তবে পুরনো দলগুলো বহু আগে থেকে রেজিস্ট্রেশনকৃত। সরকার যদি কোন দলকে নিষিদ্ধ না করে তাহলে তাদের রেজিস্ট্রেশন আমরা বাতিল করতে পারি না, এটা রাজনৈতিক অথবা কোর্টের সিদ্ধান্ত। এ ব্যাপারে আমরা কোন মন্তব্য করতে চাইনা। কোন কোন দল নিষিদ্ধ না হলে নির্বাচনে অংশ নিতে বাধা নেই। আমাদের পাশাপাশি নির্বাচন সংস্কার কমিশনও সংস্কারের মাধ্যমে সেভাবে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
১৭ বা ১৮ বছর বয়সে ভোটার করা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ,এম,এম নাসির উদ্দিন বলেন, ১৮ বছর বয়সে ভোটার করার বিষয়ে সংবিধানে উল্লেখ আছে। সংবিধান পরিবর্তন করে যদি ১৭ বছরে ভোটার করার সিদ্ধান্ত হয় তাহলে আমরা সেভাবে ব্যবস্থা নেব। সংবিধানের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। বিগত ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচন আপনারা দেখেছেন, এর পরবর্তী নির্বাচনগুলোও দেখেছেন। এখন সেই পরিস্থিতি নেই। আগের তিনটি নির্বাচন কমিশনের উপর নানামুখী চাপ ছিল, বর্তমান নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ স্বাধীন, কারও কোন ধরণের চাপ আমাদের মাঝে নেই, আমরা শুধু বিবেক, আইন-কানুন ও শাসনতন্ত্রের চাপে আছি। বর্তমান পরিস্থিতিতে এদেশে একটি ভালো ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা সম্ভব।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ভোটার তালিকা আইন অনুযাযী জানুয়ারির ১ তারিখে যাদের বয়স ১৮ বছর হবে তাদেরকে তালিকাভূক্ত করে ২ তারিখে একটি খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করতে হবে এবং মার্চের ২ তারিখে চুড়ান্ত ভোটার তালিকা হয়ে যাবে। সেটি প্রতিপালনে আমরা বদ্ধপরিকর। ভোটার তালিকা সিডিউল করার আগ পর্যন্ত এটি সংশোধন করা যায়। আমরা কাজ করতে গিয়ে দেখেছি যে, এখানে অনেক ভূয়া ভোটার আছে। অনেক বিদেশী ভোটার হয়ে গেছে, অনেক ভোটার মারা গেছে, কেউ মারা গেলে ভোটার তালিকা থেকে তার নাম বাদ দেয়ার জন্য কেউ বলে না। মৃত ভোটারগুলোর অনেকের নাম এখনও তালিকায় অমৃত হিসেবে রয়ে গেছে, কবর থেকে উঠে এসে ভোট দিচ্ছে। এখন থেকে এটা হতে দেব না, তালিকা থেকে মৃত ভোটারদের নাম বাদ দিয়ে, মহিলাসহ যাদের বয়স ১৮ বছর হয়েছে তাদেও যুক্ত করে তালিকা হালনাগাদ করতে বর্তমান অর্ন্তবর্তী সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। ইভিএম’র প্রতি মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। মহিলারা ভোটার হওয়ার জন্য এগিয়ে আসেনা। অনেকে মনে করে আমার ভোট অন্য জনে দিয়ে দেবে, নির্বাচন কেন্দ্রে গিয়ে কি হবে, তাই ভোটার হয়ে কি আর হবে। এ জন্য ভোট নিয়ে মানুষ আস্থা হারায়। মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে আগামী ৬ মাসের মধ্যে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করবো, এটা আমাদের টার্গেট। মানুষ ভোটার হওয়ার জন্য এখানে গণমাধ্যমেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
সিইসি আরও বলেন, চট্টগ্রাম থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছে। এখান থেকেই মাঠ পর্যায়ে নির্বাচনের প্রস্তুুতি শুরু হয়েছে। আমি দায়িত্ব নেয়ার পরে কমিশনের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম ভিজিটের মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু করলাম। আগামী ২ জানুয়ারী খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ হবে, আইন অনুযায়ী মার্চে সম্পন্ন করব। এটাকে আরও সংশোধন করার জন্য পরবর্তীতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ডাটা সংগ্রহ করবো। এজন্য মাঠ পর্যায়ে মতবিনিময় সভা করা হচ্ছে। নির্বাচন বা নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ নিয়ে মানুষ কেন অসন্তুুষ্ট, কি ব্যবস্থা নিলে কমিশনের উপর মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা যায়, অসন্তুুষ্টি দূর করা যায় সে বিষয়ে মতামত নেয়া হবে। নতুন এনআইডি আবেদন, এনআইডি সংশোধন ও এনআইডি পাওয়া নিয়ে সময়ক্ষেপনের বিষয়ে কমিশনে অভিযোগ আসে। পাশাপাশি রোহিঙ্গা ভোটার নিয়েও অভিযোগ রয়েছে। এসব বিষয়ে মানুষের দুর্ভোগ কিভাবে লাঘব করা যায় সেগুলোর সার্বিক বিষয়ে কমিশন সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ চেয়ে দিকনির্দেশনা দেবো।
চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ ইউনুচ আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের উপপরিচালক (স্থানীয় সরকার) মোঃ নোমান হোসেন, চট্টগ্রামের সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বশির আহমেদ, অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী, অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা রাজু আহমেদসহ কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলার নির্বাচন কর্মকর্তাগণ।

Related Posts