আহা আজি এ বসন্তে
নিজস্ব প্রতিবেবদক
য়তো ফোটেনি ফুল রবীন্দ্র-সঙ্গীতে যতো আছে,/ হয়তো গাহেনি পাখি অন্তর উদাস করা সুরে/ বনের কুসুমগুলি ঘিরে। আকাশে মেলিয়া আঁখি/ তবুও ফুটেছে জবা,-দূরন্ত শিমুল গাছে গাছে’।
হ্যাঁ; বসন্ত এসে গেছে।
রোববার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দিনপঞ্জিতে পয়লা ফাল্গুন।
ধরায় ফাগুন এসেছে গোলাপ-জবা-পারুল-পারিজাতের বুকের পরে। গাছের শাখা-প্রশাখায় পুরনো পাতার ভিড়কে পাশ কাটিয়ে দূর থেকে চেয়ে থাকার মতো তরুণীটি আজ বাসন্তী শাড়িতে বেরুবে জমাট খোঁপায় হলুদ গাঁদার ফুল গুঁজে।
তার হাত ভর্তি কাচের চুড়ির রিনিঝিনি শব্দ ঠিক যেন বুকে বাজে। তাকে হাত ধরে রাস্তা পার করা ছেলেটির পরনে থাকবে লাল।
হাতে ফুল নিয়ে দু’জনের স্মিত হাসি দিগন্ত পেরুবে! তাতে ব্যাকুলতা জাগবে কোকিলের কুহুতানে।
গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের এই যুগে ইদানিং শোনা যায় না কোকিলের কুহুতান। তবুও আপন মনে বয়ে চলা ঝিরঝিরে দখিন হাওয়া প্রাণের উষ্ণতা সঞ্চার করছে শীতে মৃতপ্রায় প্রকৃতিতে। তাতে কোথাও না কোথাও মন উচাটন করে কুহু কুহু গান গাইবে কোকিল। প্রকৃতিতে জেগে ওঠা এই বিপুল প্রাণের স্পন্দন, বুনো ফুলের গন্ধমাখা বহতা বাতাস মানুষের মনেও এক অনির্বচনীয় গভীর আবেগ জাগিয়ে তোলে। ঘুচে যায় সব দ্বিধা-সংকোচের বাধা।
শীতে হতশ্রী প্রকৃতিকে লাবণ্য সুষমা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য যেমন ঋতুরাজ বলে বসন্তের খ্যাতি, তেমনি সে যৌবন ও প্রেমের ঋতু হিসেবেও সমাদৃত হয়েছে বাঙালির কাছে। তাইতো বসন্ত নিয়ে কবি নির্মলেন্দু গুণ যেমন কাব্য করেন তেমনি বসন্ত বাতাসে পুলকিত ভাটিবাংলার কণ্ঠ শাহ আবদুল করিম গেয়ে ওঠেন- ‘বসন্ত বাতাসে… সই গো/ বসন্ত বাতাসে!’ প্রাকৃতিক রূপ-রস-গন্ধের মহাসমারোহের কারণেই তাকে প্রেমের ঋতু বলাটা মোটেও অত্যুক্তি হয় না। এ ঋতুতে প্রকৃতি নিজেকে অন্যরূপে সাজিয়ে তোলে। বাগানজুড়ে ফুল-ফল, শাখে শাখে নতুন পাতা, দিকে দিকে পাখির কলতান, দখিন হাওয়া, নতুন প্রাণ, অনাবিল প্রেম- এমনি এমনি তো আর ঋতুরাজ আখ্যা পায়নি বসন্ত!
বসন্ত কেবল এই উপমহাদেশীয় অঞ্চলেই নয়, পশ্চিমেও কম ছুঁয়ে যায় না। যেটি কিংবদন্তি সঙ্গীত শিল্পী জন ডেনভার যেনো সবচেয়ে গভীরভাবে বলেছেন, ‘ইউ ফিল আপ মাই সেনসেস, লাইক দ্য মাউন্টেইনস্ ইন স্প্রিং টাইম…’। অর্থাৎ আমাদের বসন্তদিন, তাদের স্প্রিং টাইম। বিশ্বের দিকে দিকে নানাভাবে বসন্ত বরণ বা বসন্ত উৎসব উদযাপন করা হয়। বসন্ত মানে নতুন, বসন্ত মানে আনন্দ। ঠিক যেন- ‘সুখের বসন্ত সুখে হোক সারা’।
বাংলা বর্ষপঞ্জি সংশোধনের কারণে এবার বাংলা ফাল্গুন মাসের প্রথম দিন ও ভালোবাসা দিবস পড়েছে একই দিনে। ফেব্রুয়ারি মাসের ১৩ তারিখে ফাল্গুন মাসের প্রথম দিন উদযাপন হতো, আর ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব জুড়ে পালন করা হয় ভালোবাসা দিবস। তবে এখন দুটি দিবসই বাংলাদেশে একই দিনে। বাংলার বসন্তের সঙ্গে পশ্চিমা সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন ডে। তাইতো এদিনে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভালোবাসায় মহিরুহ হয়ে উঠবে গোটা হৃদয়।