নিজস্ব প্রতিবেদক
হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত কুলসুম আক্তার কুলসুমীর বদলে চট্রগ্রামে কেন্দ্রীয় কারাগারে সাজা ভোগ করা মিনুর নথি এখন হাইকোর্টে। চট্টগ্রামের চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত থেকে বিশেষ বার্তা বাহকের মাধ্যমে হাইকোর্টে পাঠানো হয়েছে।
বুধবার দুপুরে এই নথি হাইকোর্টের আদান-প্রদান শাখায় পৌছে বলে জানান ওই শাখার প্রশাসনিক কর্মকর্তা কে এম ফারুক হোসেন।
এর আগে ২৩ মার্চ মঙ্গলবার ওই নথি হাইকোর্টে পাঠানোর আদেশ দেন চট্টগ্রামের চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ শরীফুল আলম ভূঁঞা। এই আদেশের পরদিনই নথি হাইকোর্টে পৌছেছে। নিম্ন আদালতের সাজার বিরুদ্ধে আসামির করা আপিল হাইকোর্টে বিচারাধীন থাকায় মিনুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সংশ্লিষ্ট নথি পাঠানো হয়েছে।
জানা যায়, ২০০৬ সালের ৯ জুলাই নগরীর রহমতগঞ্জ এলাকায় মোবাইল ফোন নিয়ে বিবাদের জেরে পোশাক কারখানার কর্মী কোহিনুর বেগম খুন হন। এ ঘটনায় করা মামলায় ২০০৭ সালের ২৬ অক্টোবর কুলসুমীকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০০৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম আদালত থেকে জামিন পেয়ে কারাগার থেকে মুক্তি পান কুলসুমী। পরবর্তীতে এ মামলায় বিচার শেষে ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর রায় দেয় চট্টগ্রামের চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত। রায়ে কুলসুমীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো একবছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ রায়ের পর মিনু টাকার বিনিময়ে কুলসুমী সেজে ২০১৮ সালের ১২ জুন চট্টগ্রাম আদালতে আত্মসমর্পন করেন। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। সেই থেকে মিনু কারাবন্দী। এরপর নিম্ন আদালতের সাজার বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে হাইকোর্টে আপিল করেন কুলসুমী। একারণে ওইবছরের ১২ জুন মামলার নথি হাইকোর্টে পাঠানো হয়। মামলাটি এখন বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলামের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে বিচারাধীন। সর্বশেষ গত ১১ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের কার্যতালিকায় ছিল মামলাটি।
গত ১৮ মার্চ বিষয়টি চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. শফিকুল ইসলাম খানের নজরে আসে। এরপর তিনি তা গত ২১ মার্চ রায় প্রদানকারী আদালতের নজরে আনেন। এরপর মিনুকে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হলে ২২ মার্চ কারাগার থেকে মিনুকে আদালতে হাজির করা হয়। মিনু হাজির হয়ে আদালতকে জানান, ‘তিনবছর আগে মর্জিনা নামের একজন মহিলা ডাল-চাল দিবে বলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে জেলে ঢুকায় দেয়। আমি তখন ভাসমান বস্তি নিজের ঘরে ছিলাম।’ ‘মর্জিনা বলেছিল রোজা পার হলেই আমাকে জেলখানা থেকে বের করবে। আমি এখন বের হতে চাই।’ এরপর আদালত ২৩ মার্চ মামলার নথি হাইকোর্টে পাঠানোর আদেশ দেন।
দণ্ডিত কুলসুমী চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার উপজেলার গৌরস্থান মাঝেরপাড়া গ্রামের আনু মিয়ার মেয়ে। তাঁর স্বামীর নাম ছালেহ আহমদ। তিনি স্বামীর সঙ্গে কোতোয়ালী থানার রহমতগঞ্জে সাঈদ ডাক্তারের ভাড়া থাকেন। আর মিনুর বাড়ি সীতাকুণ্ড উপজেলার জঙ্গল সলিমপুর জাফারাবাদ এলাকায়। তার পিতার নাম সোলাইমান ও মা সালেহ বেগম, স্বামী মোহাম্মদ বাবুল। গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার ময়নামতিতে। মিনুর দুই ছেলে ও একমেয়ে রয়েছে। বড় ছেলে ইয়াছিন(১২)। সে একটি দোকানের কর্মচারি। আরেকজন গোলাম হোসেন(৭) হেফজখানায় পড়ছে। ছোট মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস(৫)। তাকে স্থানীয় এক ব্যক্তি লালন-পালন করছেন। মিনুর স্বামী ঠেলাগাড়ি চালক বাবুল সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওযার পর সন্তান নিয়ে ভাসমান বস্তিতে থাকতেন।