সিনিউজ ডেস্ক
সহকর্মীদের ‘হত্যার’ দায়ে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করেছে বাশঁখালি থানার পুলিশ।
বাঁশখালী এস এস পাওয়ার প্লান্টে গুলিতে পাঁচ শ্রমিক নিহত ও কমপক্ষে ২০ জন গুলিবিদ্ধ হবার ঘটনায় শ্রমিক ও বহিরাগতরা শ্রমিকদের গুলি চালিয়ে হত্যা করেছে বলে দাবি করেছে পুলিশ। সহকর্মীদের হত্যার দায়ে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করেছে বাশঁখালি থানার পুলিশ।
সংঘর্ষের পর শনিবার রাতে গন্ডামারা পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মো. রাশেদুজ্জামান বেগ অজ্ঞাত দুই থেকে আড়াই হাজারজনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় আরো বলা হয় শ্রমিকেরাই আগে পুলিশ ও পাওয়া প্লান্টে কর্মরত চীনা শ্রমিকদের উপর হামলা করে। এক পর্যায়ে শ্রমিকদের বাসস্থান বাংলা লিভিং হতে (নির্মাণাধীন পাওয়া প্লান্টের অভ্যন্তরে শ্রমিকদের থাকার জায়গা) পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় শ্রমিকরা। এসময় চীনা শ্রমিকদের জানমাল ও বিদ্যুৎকেন্দ্রের সম্পদ রক্ষার্থে পুলিশ গুলি চালায়।
তবে শ্রমিকদের হামলায় কোন চীনা শ্রমিক আহত হয়নি বা পুলিশ গুলিবিদ্ধ হওয়ার কোনো ঘটনা নেই; নেই কোন অস্ত্র উদ্ধারও। বিষয়টি নিশ্চিত করে বাঁশখালী থানার ওসি শফিউল কবির বলেন, ‘হামলায় তিন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। চীনা শ্রমিক আহতের ঘটনা নেই।’
এদিকে ঘটনার দিন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আনোয়ারুল হক জানিয়েছিলেন, আহত শ্রমিকদের সবাই গুলি বা স্প্লিন্টারে বিদ্ধ। তবে পুলিশ সদস্যরা আহত হয়েছেন ইটের আঘাতে।
বাশঁখালি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংঘর্ষের ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। একটি পুলিশ বাদী হয়েছে অন্যটি পাওয়ার প্লান্টের পক্ষ থেকে করা হয়েছে।
পুলিশের মামলার এজহারে বলা হয়েছে, শনিবার সকাল ৯ টা থেকে ৯ টি দাবি নিয়ে জড়ো হয়ে শ্রমিকরা আন্দোলন করছিলো। একই সময় বিপুল সংখ্যক বহিরাগত কাঁটাতারের বেড়া ভেঙ্গে প্রকল্প এলাকায় প্রবেশ করে। পরে শ্রমিক ও বহিরাগতরা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অভ্যন্তরে ভাংচুর করে। বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ করে আনুমানিক ১৫ কোটি টাকার ক্ষতি সাধন করে এবং প্রায় ১০ কোটি টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায় বলে এজাহারে উল্লেখ রয়েছে।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, “গন্ডামারা এস এস পাওয়ার প্লান্টে অজ্ঞাতনামা দুই থেকে আড়াই হাজার শ্রমিক – বহিরাগত প্লান্টের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও পুলিশকে হত্যার উদ্দেশ্য আক্রমণ করে মারধর করত গুরুতর জখম করে ও গুলি বর্ষণ করে ৫ জন শ্রমিককে হত্যা করে।”
যদিও শ্রমিকেরা দাবি করেছে তারা যখন ন্যায় সংগত দাবি নিয়ে কথা বলছেন তখন পুলিশ নিরস্ত্র শ্রমিকদের উপর বিনা উস্কানিতে গুলি চালিয়ে তাদের হত্যা করেছে।
জাহিদুল ইসলাম বিদ্যুৎ কেন্দ্রে রিগারম্যান হিসেবে কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘পুলিশ গুলি করে আমার সহকর্মীদের হত্যা করেছে। পুলিশ নিজেরা পাওয়ার প্লান্টের ভিতরে একটি কারে আগুন দিয়ে পরিস্থিতি সৃষ্টি করে গুলি চালায়।’
মামলার তথ্য মতে গুলির ঘটনার সময় পুলিশের উর্ধতন কোন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন না। গন্ডামারা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সাব ইন্সপেক্টর মো. রাশেদুজ্জামান বেগের নির্দেশে গুলি করা হয়।
এ বিষয়ে কথা বলতে মামলার বাদি ও গন্ডামারা পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মো. রাশেদুজ্জামান বেগ এর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।
এছাড়া, যানবাহনে অগ্নিসংযোগের অভিযোগে শিল্প গ্রুপ এস আলমের মালিকানায় নির্মাণাধীন এসএস পাওয়ার প্ল্যান্টের প্রধান সমন্বয়ক ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে ২২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় এক হাজার ৪০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেছেন, শ্রমিক ও বহিরাগতরা ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে ১৫ কোটি টাকার ক্ষতিসাধন করেছে। মামলায় বেশ কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দার নাম উল্লেখ আছে।
সূূত্রঃ বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড