নিজস্ব প্রতিবেদক
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে অমিত মুহুরি হত্যার ঘটনায় একমাত্র আসামি রিপন নাথের বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছে আদালত।
চট্টগ্রামের চতুর্থ অতিরিক্ত চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ শরীফুল আলম ভূঁঞা রোববার আসামির উপস্থিতিতে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।
সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর জন্য তিনি ১৫ মার্চ দিন ধার্য করেছেন জানিয়ে এ আদালতের বেঞ্চ সহকারী ওমর ফুয়াদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সেদিন মামলার বাদী চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সেই সময়ের জেলার নাশির আহমেদ সাক্ষ্য দেবেন।”
চট্টগ্রাম নগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের পরিদর্শক মো. আজিজ আহমেদ ২০২০ সালের ২৫ জুলাই এ মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। সেখানে মোট ২৮ জনকে সাক্ষী করা হয়।
২০১৯ সালের ২৯ মে রাতে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের ৩২ নম্বর সেলের ছয় নম্বর কক্ষে ইটের টুকরো দিয়ে মাথার পেছনে আঘাত করা হয় এক সময়ের যুবলীগ কর্মী অমিত মুহুরীকে। পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় রিপন নাথ নামের ২৮ বছর বয়সী যে হাজতিকে আসামি করা হয়, তাকে ঘটনার দিন বিকালে ওই কক্ষে নেওয়া হয়েছিল। একটি অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে ২০১৯ সালের এপ্রিল থেকে কারাগারে আছেন রিপন।
সীতাকুণ্ড উপজেলার মৃত নারায়ণ চন্দ্র নাথের ছেলে রিপন এক সময় পাহাড়তলীর সাগরিকা এলাকার অর্গানিক জিন্স নামের একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। অশোভন আচরণের জন্য তাকে ওই কারখানা থেকে ছাঁটাই করা হয়।
পরে ছুরি হাতে ওই কারখানায় ঢুকে বেশ কিছু কর্মীকে জিম্মি করার অভিযোগে রিপনকে গ্রেপ্তার করে পাহাড়তলী থানা পুলিশ।
কারাগারে খুন হওয়া অমিত মুহুরী কোতোয়ালী থানার নন্দনকানন গোলাপ সিং লেইনের অরুন মুহুরীর ছেলে।
কেন্দ্রীয় যুবলীগের উপ-অর্থ বিষয়ক সম্পাদক হেলাল আকবর চৌধুরী বাবরের অনুসারী হিসেবে পরিচিত অমিতের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালে রেলের দরপত্র নিয়ে জোড়া খুনসহ অন্তত ১৩টি মামলা ছিল। হত্যা, পুলিশের ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগে আগেও তিনি একাধিকবার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।
সর্বশেষ নিজের বন্ধু ইমরানুল করিম ইমনকে হত্যার অভিযোগে ২০১৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর পুলিশ গ্রেপ্তার করে অমিতকে। তারপর থেকে তিনি কারাগারেেই ছিলেন।
ওই বছর ৯ অগাস্ট নন্দনকানের হরিশ দত্ত লেইনে অমিতের বাসায় ইমনকে হত্যা করা হয়। এরপর লাশ ড্রামে ভরে সিমেন্ট ঢালাই করে ফেলে দেওয়া হয় এনায়েত বাজারের রানীর দিঘীতে।
এক মাসের মাথায় কুমিল্লার একটি মাদক নিয়াময় কেন্দ্র থেকে গ্রেপ্তার হওয়ার পর আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে অমিত বলেছিলেন, তার স্ত্রীকে ‘প্রায়ই উত্ত্যক্ত করতেন’ ইমন। এ কারণেই তাকে হত্যা তিনি করেন।
অমিত মুহুরী হত্যা মামলার আসামি রিপনও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, ঘুমানোর আগে অমিত মুহুরী তাকে সিগারেট খেতে বারণ করে এবং পায়ের কাছে ঘুমাতে বলে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়।
কিন্তু তার কথা না শুনে অমিতের পাশে আরেক হাজতি বেলালকে রেখে রিপন বেলালের ডান পাশে শুয়ে পড়ে। অমিত ঘুমিয়ে পড়লে ১০ মিনিট পর রিপন উঠে খাবার গরম করার জন্য রাখা ইট দিয়ে অমিতের মাথায় ৮/৯টি আঘাত করে।
এসময় বেলাল উঠে রিপনকে পেছন থেকে টেনে ধরে এবং চিৎকার করে কারারক্ষীদের ডাকে বলে জবানবন্দিতে জানিয়েছিলেন রিপন নাথ।
তদন্ত শেষে তাকেই একমাত্র আসামি করে অভিযোগপত্র দেন চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মো. আজিজ আহমেদ।