রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় জিল্লুর ভাণ্ডারী নামে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যার দায়ে দু’জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ৬ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। মামলার সাত বছর পর রায় ঘোষণা করেছে আদালত।
চট্টগ্রামের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ শেখ ছামিদুল ইসলাম গতকাল মঙ্গলবার এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি হলেন, শহীদুল ইসলাম খোকন ও ইসমাইল। এছাড়া আবু, কামাল, জসিম, তোতা মিয়া, নাছির ও সুমনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে রায়ে।
তাদের মধ্যে কারাগারে থাকা শহীদুল ইসলাম খোকনকে রায়ের সময় আদালতে হাজির করা হলেও বাকিরা পলাতক।
হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত না হওয়ায় এ মামলার অন্য পাঁচ আসামি জাহাঙ্গীর, রমিজ উদ্দিন রঞ্জু, আজিম, নাজিম ও শাহাব উদ্দিনকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
বাদীপক্ষের আইনজীবী আবদুস সাত্তার বলেন, রায়ে আমরা প্রাথমিকভাবে সন্তুষ্ট। ৫ আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে, তাদের বিষয়ে আপিল করা হবে কিনা তা পূর্ণাঙ্গ রায় পেলে চিন্তা করে দেখব।
তিনি বলেন, মামলার প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের এসআই হায়দার আলী আকন্দ তার প্রতিবেদনে প্রধান দুই আসামিকে বাদ দিয়েছিলেন। এমনকি আসামিদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকার বিষয়টিও উল্লেখও করেননি।
বাদী বিদেশে থাকায় তার ভাই নারাজি আবেদন করেন। এরপর সিআইডি তদন্ত করে আবার সম্পূরক চার্জশিট দেয়। আজ রায়ে সেই দুই আসামির সর্বোচ্চ সাজা হয়েছে।
২০১৫ সালের ২১ জানুয়ারি রাতে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার রানীরহাট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মূল ফটকের কাছে জিল্লুর রহমান ওরফে জিল্লুর ভাণ্ডারিকে মারধরের পর গুলি করে হত্যা করা হয়।
ওই ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই মোহাম্মদ আজিম উদ্দিন রাঙ্গুনিয়া থানায় হত্যা মামলা করেন। পরে ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর ১৩ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ- সিআইডি।
২০১৯ সালের ২৮ মে অভিযোগ গঠন করে আসামিদের বিচার শুরু হয়। মামলার অভিযোগপত্রে মোট ২৫ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৩ জনের সাক্ষ্য শোনে আদালত।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, জিল্লুর ভাণ্ডারির ভাই মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন বাবলুকে ঘটনার তিন মাস আগে স্পন্সর হিসেবে কাতারে নেন আসামি ইসমাইলের ভাই মোহাম্মদ জব্বার। কিন্তু ভিসা নিয়ে জটিলতা দেখা দিলে বাবলুর সাথে জব্বারের কথা কাটাকাটি হয়। ওই অবস্থায় স্পন্সরশিপ বাতিল করে বাবলুকে দেশে পাঠিয়ে দেন জব্বার।
২০১৫ সালের ২০ জানুয়ারি রাতে ইসমাইলকে রানিরহাট বাজারে পেয়ে জিল্লুর ভাণ্ডারি তার ছোট ভাইকে দেশে ফেরত পাঠানোর কারণ জানতে চান। স্পন্সরশিপের জন্য দেওয়া ২ লাখ ৫০ হাজার টাকাও ফেরত চান।
এ নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। পরদিন রাতে জিল্লুরকে একা পেয়ে মারধর শুরু করে আসামিরা। পরে তার পায়ে গুলি করা হয়।
আহত অবস্থায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে রাতেই তার মৃত্যু হয়।
জিল্লুর ভাণ্ডারির ভাই আজিম উদ্দিনের করা মামলায় ৮ আসামির নাম উল্লেখ করা হয়েছিল। এর বাইরে আরও চার-পাঁচ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছিল। তদন্ত শেষে ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।
দুই পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে গত ১২ ডিসেম্বর এ মামলার রায়ের জন্য ১১ জানুয়ারি দিন রেখেছিল আদালত। দুই দফা পিছিয়ে মঙ্গলবার সেই রায় হল।