জাতীয় রাজনীতি লিড নিউজ

চট্টগ্রামসহ সারাদেশ লকডাউনে

 

সিনিউজ ডেস্ক
করোনা সংক্রমন অস্বাভাবিকহারে বেড়ে যাওয়ায় দ্বিতীয় দফায় লকডাউনে গেল চট্টগ্রামসহ সারাদেশ।

সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সোমবার (৫ এপ্রিল)সকাল থেকে শুরু হলো এক সপ্তাহের লকডাউন।
সোমবার থেকে কার্যকর লকডাউনে বন্ধ রয়েছে সব ধরনের গণপরিবহন (বাস, ট্রেন, লঞ্চ ও প্লেন)।
সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত জরুরি প্রয়োজনে সীমিত পরিসরে খোলা রাখা হয়েছে। তবে বন্ধ রয়েছে শপিংমল-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
নির্দিষ্ট সময়ের জন্য খোলা রয়েছে নিত্যপণ্যের দোকান।
নগরীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে,দোকান পাট,ব্যবসা প্রতিষ্ঠান,শপিংমল বন্ধ রয়েছে।গণপরিবহন চলাচল করছে না। কোন ধরনের গণপরিবহন চলছে না।
আপাতত আগামী রোববার (১১ এপ্রিল) পর্যন্ত লকডাউন দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

‘করোনা ভাইরাসজনিত রোগ কোভিড-১৯ এর বিস্তার রোধে শর্ত সাপেক্ষে সার্বিক কার্যাবলি/চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ’ শিরোনামের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণের বিদ্যমান পরিস্থিতি পর্যালোচনায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় কর্তৃক গত ২৯ মার্চ তারিখের ১৮ দফা নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

ওই স্মারকের ধারাবাহিকতায় ৫ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে ১১ এপ্রিল রাত ১২টা পর্যন্ত প্রতিপালনের জন্য প্রজ্ঞাপনে ১১টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে বিধি-নিষেধ

১. সকল প্রকার গণপরিবহন (সড়ক, নৌ, রেল ও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট) বন্ধ রয়েছে। তবে পণ্য পরিবহন, উৎপাদন ব্যবস্থা, জরুরি সেবাদানের ক্ষেত্রে এ আদেশ প্রযোজ্য হবে না। এছাড়া, বিদেশগামী/বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে না।
২. আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিষেবা, যেমন- ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরসমূহের (স্থলবন্দর, নদীবন্দর ও সমুদ্রবন্দর) কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট, ডাক সেবাসহ অন্যান্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহ, তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এ নিষেধাজ্ঞার আওতা বহির্ভূত রয়েছে।
৩. সব সরকারি/আধাসরকারি/স্বায়ত্তশাসিত অফিস ও আদালত এবং বেসরকারি অফিস কেবল জরুরি কাজ সম্পাদনের জন্য সীমিত পরিসরে প্রয়োজনীয় জনবলকে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনায় অফিসে আনা-নেওয়া করতে পারছে। শিল্প-কারখানা ও নির্মাণ কার্যাদি চালু রয়েছে। শিল্প-কারখানার শ্রমিকদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পরিবহন ব্যবস্থাপনায় আনা-নেওয়া করতে হচ্ছে। বিজিএমইএ ও বিকেএমইএকে শিল্প-কারখানা এলাকায় কাছাকাছি সুবিধাজনক স্থানে তাদের শ্রমিকদের জন্য ফিল্ড হাসপাতাল/চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হচ্ছে।
৪. সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া (ওষুধ ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসাসেবা, মৃতদেহ দাফন/সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না।
৫. খাবারের দোকান ও হোটেল-রেস্তোরাঁয় কেবল খাদ্য বিক্রয়/সরবরাহ করা যাবে। কোনো অবস্থাতেই হোটেল-রেস্তোরাঁয় বসে খাবার গ্রহণ করা যাবে না।
৬. শপিংমলসহ অন্যান্য দোকান বন্ধ রয়েছে। তবে দোকান, পাইকারি ও খুচরা পণ্য অনলাইনের মাধ্যমে কেনাবেচাা করতে পারবে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই সর্বাবস্থায় কর্মচারীদের মধ্যে আবশ্যিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে এবং কোনো ক্রেতা সশরীরে যেতে পারবে না।
৭. কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেনা-বেচা করা যাবে। বাজার কর্তৃপক্ষ/স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করবে।
৮. ব্যাংকিং ব্যবস্থা সীমিত পরিসরে চালু রাখার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে।
৯. সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ ঢাকায় সুবিধাজনক স্থানে ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
১০. সারাদেশে জেলা ও মাঠ প্রশাসন এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নের কার্যকর পদক্ষেপ নেবে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত টহল জোরদার করবে।
১১. এ আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সিনিয়র সচিব/সচিবকে এ নির্দেশনা পাঠিয়ে তা অধীন দপ্তর/সংস্থাগুলোকে বাস্তবায়ন করতে নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
এর আগে শনি থেকে রোববার (৪ এপ্রিল) পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও ৫৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মোট মৃত্যু হয়েছে ৯ হাজার ২৬৬ জনের। এ সময়ে নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ৭ হাজার ৮৭ জন। যা একদিনে করোনায় সর্বোচ্চ শনাক্ত। সব মিলিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৩৭ হাজার ৩৬৪ জনে।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন শনিবার (৩ এপ্রিল) দুপুরে বলেছিলেন, আগামী দুই থেকে তিনদিনের মধ্যে এক সপ্তাহের জন্য সারাদেশে লকডাউনে যাচ্ছে সরকার।

গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম তিনজনের দেহে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম একজনের মৃত্যু হয়।

গত বছরের ২৬ মার্চ থেকে শুরু করে ৬৬ দিনের লকডাউন ছিল সারাদেশে। এ সময়ে জরুরি ছাড়া সব যানবাহন বন্ধ ছিল।  আর ১৮ মার্চ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। সংক্রমণ কমে গেলে ৩০ মার্চ স্কুল-কলেজ খোলার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে ২৩ মে করা হয়। আর পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলবে ২৪ মে।

 

Related Posts