চট্টগ্রাম লিড নিউজ

চট্টগ্রামের বিএনপি নেতার ৪৮ কোটি টাকা সুদ মাফ করল কৃষি ব্যাংক,নথি তলব হাইকোর্টের

সিনিউজ ডেস্ক

কৃষি ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখা থেকে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক মোহাম্মদ আলী আব্বাসের নেওয়া ৮৫ কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে ৪৮ কোটি টাকা সুদ মওকুফ করা সংক্রান্ত নথি তলব করেছেন হাইকোর্ট। চার সপ্তাহের মধ্যে এই নথি দাখিল করতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে ৪৮ কোটি টাকা সুদ মওকুফ করার সিদ্ধান্ত কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষনা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়েছে। অর্থ সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর, বাংলাদেশ ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট এবং বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালককে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার এ আদেশ দেন। ৪৮ কোটি টাকা সুদ মওকুফ করার সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে দাখিল করা এক রিট আবেদনে এ আদেশ দেন। গত ৫ মে দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকায় ‘অবৈধভাবে বিএনপি নেতার ৪৮ কোটি টাকা সুদ মাফ’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে এই রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আনিছুর রহমান। রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট চঞ্চল কুমার বিশ্বাস। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দু কুমার রায়।

পরে অ্যাডভোকেট চঞ্চল কুমার বিশ্বাস জানান, পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে কৃষি ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের ৭৪০তম সভায় অনারোপিত সুদের ১০০ শতাংশ অর্থাৎ ৪৭ কোটি কোটি ৬৯ লাখ ৯৪ হাজার এবং স্থগিত সুদ ৪১ লাখ ৪২ হাজারের অর্ধেক ২০ লাখ ৭১ হাজার টাকাসহ সর্বমোট ৪৭ কোটি ৯০ লাখ ৬৫ হাজার টাকা সুদ মওকুফ করা হয়। আদালত এই সিদ্ধান্তের নথি তলব করেছেন। একইসঙ্গে রুল জারি করেছেন।

দৈনিক কালের কন্ঠ পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় এক দশক আগে ব্যবসার জন্য কৃষি ব্যাংক থেকে ৮৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিলেন চট্টগ্রামের এক বিএনপি নেতা। ঋণ পরিশোধ না করায় দুই বছর পর অর্থঋণ আদালতে মামলা হয়েছিল। ওই টাকায় নিজের ও স্ত্রীর নামে সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনও মামলা করে। কিন্তু দুটি মামলার কোনোটি নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই কৃষি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ওই ঋণের প্রায় ৪৮ কোটি টাকা সুদ মওকুফ করে দিয়েছে। অবৈধভাবে এই সুদ মওকুফের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক অনুসন্ধান করে একটি প্রতিবেদন দিয়েছে। বিএনপির এই নেতার নাম মোহাম্মদ আলী আব্বাস। তাঁর

ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান হলো মেসার্স আব্বাস ট্রেডিং। কৃষি ব্যাংক সূত্র, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন এবং মামলার এজাহার সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, চট্টগ্রাম নগরের কর্ণফুলী থানাধীন খোয়াজনগর এলাকার মোহাম্মদ আলী আব্বাস চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক। বর্তমানে দলের কোনো কমিটিতে নেই তিনি। একসময় পাথরঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার ছিলেন। আন্দরকিল্লায় তাঁর মালিকানাধীন আব্বাস ট্রেডিংকে ভোগ্য পণ্য আমদানির জন্য ঋণ দেওয়া হয় ২০১১ সালে। পণ্য এনে বিক্রির পর ঋণ পরিশোধের কথা থাকলেও ১০ বছরেও ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করেননি আব্বাস। নিজের ও স্ত্রীর নামে সম্পদ অর্জনের মাধ্যমে এই টাকা রূপান্তর করা ও অর্থপাচারের অভিযোগে ২০১৩ সালে কোতোয়ালি থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন(দুদক)। এই মামলায় কারাগারে যান আব্বাস। পরে উচ্চ আদালত থেকে জামিন পান। মামলাটি এখন মহানগর বিশেষ আদালতে বিচারাধীন। একই অভিযোগে ওই বছর কৃষি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আব্বাসের বিরুদ্ধে অর্থঋণ আদালতে মামলা করে। সেই মামলাও নিষ্পত্তি হয়নি।

জানা গেছে, ২০১৯ সালের ৩০ জুন বিএনপি নেতা আব্বাস ঋণের সুদ মওকুফের আবেদন করেন। কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় বিআরপিডি সার্কুলার-৫-এর আওতায় সুদ মওকুফের জন্য ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের ৭৪০তম সভায় কার্যপত্র উপস্থাপন করে। সভায় অনারোপিত সুদের ১০০ শতাংশ অর্থাৎ ৪৭ কোটি কোটি ৬৯ লাখ ৯৪ হাজার এবং স্থগিত সুদ ৪১ লাখ ৪২ হাজারের অর্ধেক ২০ লাখ ৭১ হাজার টাকাসহ সর্বমোট ৪৭ কোটি ৯০ লাখ ৬৫ হাজার টাকা সুদ মওকুফ করা হয়। অবশিষ্ট পাওনা ৯ শতাংশ সুদে ১০ বছরে মোট ৩৬টি ত্রৈমাসিক কিস্তিতে পরিশোধের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। অনুসন্ধান প্রতিবেদনে অনিয়মের মাধ্যমে ৪৮ কোটি টাকা সুদ মওকুফের প্রমাণ পাওয়ায় একটি কমিটি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এই কমিটিতে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও কৃষি ব্যাংকের প্রতিনিধি আছেন। কমিটি অনিয়ম চিহ্নিত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে সুপারিশ করার কথা রয়েছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখার ব্যবস্থাপক শাহাদত হোসাইন  বলেন, ‘ব্যাংকের টাকা শোধ না করায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। তবে ঋণটি এরই মধ্যে পুনঃ তফসিল করা হয়েছে।’

আব্বাস ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ আলী আব্বাস  বলেন, ‘ঋণ পুনঃ তফসিল হওয়ার পর এরই মধ্যে দুই কিস্তির টাকা পরিশোধ করেছি। পুনঃ তফসিলের শর্তানুযায়ী বাকি টাকাও শোধ করা হবে।’

সূত্র,কালের কণ্ঠ

Related Posts