সিনিউজ ডেস্ক
পরকীয়া সম্পর্কের সুযোগে বারবার এক নারীকে শারীরিক সম্পর্কে বাধ্য করে শাহজাহান আলী (৪০) নামে এক ব্যক্তি। ওই নারী এতে অতিষ্ঠ হয়ে যান। সংসার ভেঙে যাবার উপক্রম হয়। সব ঘটনা খুলে বলে তার স্বামী ও পরিবারকে। এরপর ওই নারী শারীরিক সম্পর্কের টোপ দিয়ে শাহজাহানকে এক আত্মীয়র বাড়িতে ডাকেন। সেখানে খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে ওই নারীর স্বামীসহ চার-পাঁচজন মিলে শাহজাহানকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। হত্যার পর লাশ টয়লেটের সেফটি ট্যাংকে গুম করে তারা ঢাকায় এসে আত্মগোপন করে। তবে শেষ রক্ষা হয়নি, পিবিআই গ্রেফতার করে তাদের। গ্রেফতারের পর তারা হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকারও করেছেন।
মঙ্গলবার (২৫ মে) সকালে পিবিআইর পাবনা ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার জনাব ফজলে এলাহী এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, পাবনা জেলার সদর থানার শালগাড়ীয়া প্লাস্টিক মোড় এলাকা থেকে গত ৩১ মার্চ শাহজাহান আলী অপহৃত হয়। এ বিষয়ে শাহজাহানের পরিবার লোকজন গত ১ এপ্রিল পাবনা সদর থানায় একটি নিখোঁজ জিডি করেন। গত ৫ এপ্রিল বেলা আড়াইটায় গঙ্গারামপুর হাফিজিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন কাসেম নামে এক ব্যক্তির বাড়ির টয়লেটের সেফটি ট্যাংক থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে ভিকটিমের ভাই আব্দুল গফুর পাবনা সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি প্রথমে পাবনা সদর থানা পুলিশ তদন্ত শুরু করে। গত ১০ এপ্রিল পিবিআই তদন্তের দায়িত্ব পায়। তদন্ত শুরু করে পিবিআই।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সবুজ আলী বলেন, এটি একটি পূর্ব পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। পরকীয়ার জের ধরে মামলার ভিকটিম শাহজাহান আলী (৪০) ও গৃহবধূর (২৮) মধ্যে সম্পর্কের টানাপড়েন চলতে থাকে। ওই নারী তার পরিবারসহ যে বাসায় ভাড়া থাকত তার মালিক চট্টগ্রামে বসবাস করে। ওই বাসার ভাড়া উঠানোর দায়িত্ব ছিল ভিকটিম শাহজাহানের ওপর। তাদের বাসাও ছিল পাশাপাশি স্থানে। তারা মোবাইল ফোনে মাঝেমধ্যে কথা বলতে থাকার কারণে এক পর্যায়ে পরকীয়ার সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। শাহজাহান ব্যক্তি জীবনে অবিবাহিত ছিলেন। শাহজাহান ওই নারীকে বিভিন্ন সময়ে অনৈতিক সম্পর্কে জড়াতে বাধ্য করতেন। এতে তার সংসার ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। এক পর্যায়ে শাহজাহানের প্রতি বিরক্ত হয়ে সকল ঘটনা তার পরিবারকে খুলে বলে। তখন ওই গৃহবধূর স্বামী ও তার সহযোগীরা শাহজাহানকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
এসআই সবুজ আলী বলেন, ওই নারী ভিকটিম শাহজাহানকে হত্যার উদ্দেশে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রলোভন দেখিয়ে গত ৩১ মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে আটঘরিয়া থানাধীন গঙ্গারামপুর গ্রামে তাদের এক নিকট আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে ওই নারী ও তার স্বামী জাহাঙ্গীরসহ অন্যান্য আসামিরা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী খাবারের মধ্যে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে ভিকটিম শাহজাহানকে খাওয়ায়। শাহজাহান আলী ঘুমিয়ে পড়লে জাহাঙ্গীর এবং অন্যান্য আসামিরা শাহজাহানের হাত-পা বেধে গলার রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। একপর্যায়ে তারা লাশ গুম করার উদ্দেশে বস্তাবন্দি করে আটঘরিয়া থানাধীন গঙ্গারামপুর হাফিজিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন কাসেমের বাড়ির টয়লেটের সেফটি ট্যাংকের ভিতরে ফেলে দিয়ে খড়-কুটা দিয়ে ঢেকে রাখে। পরবর্তীতে ওই নারী ও তার স্বামী জাহাঙ্গীর ঢাকা পালিয়ে আসে।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ১২ মার্চ আসামি ইব্রাহীমকে গ্রেফতার করে পুলিশ, সে আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দেয়। হত্যার সঙ্গে জড়িত দুজন এখনও পলাতক।